Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bangladesh issue

স্তিমিত আর জি কর, বাংলাদেশে ইস্যু খুঁজছে বিজেপি, বাম-কংগ্রেস এখনও দিশেহারা

মমতা বাংলাদেশ নিয়ে যতটা প্রতিক্রিয়াশীল, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ততটাও নয়। 

RG Kar fails to dent TMC armour, BJP banks on Bangladesh issue, CPM-Congress still in limbo
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:December 5, 2024 5:25 pm
  • Updated:December 5, 2024 9:44 pm  

অনুরাগ রায়: শেষ কবে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে বড় কোনও রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে? রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সংগঠিতভাবে জনতার ইস্যু নিয়ে কবে পথে নেমেছে? মনে করা দুষ্কর। বাম-কংগ্রেসের অবস্থা তথৈবচ। বস্তুত বাংলার বিরোধীরা হয় ইস্যুহীন, নয় দিশেহারা।

অনেকে অবশ্য বলবেন, সদ্যই আর জি করের মতো এত বড় গণআন্দোলন সংগঠিত হল বাংলায়। হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে রাতদখল করলেন, সেটাই তো সাম্প্রতিক বাংলার সবচেয়ে বড় আন্দোলন। সমস্যা হল, এই আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ মোটেই রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। অভয়ার বিচারের দাবিতে মানুষের পথে নামাকে কোনওভাবেই শুধু শাসক বিরোধী আন্দোলন বলে দেগে দেওয়া যায় না। ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘৃণ্য ঘটনার প্রতিবাদকে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত ভাবলে ভুল হবে।  আর জি কর ছিল প্রকৃতপক্ষেই অরাজনৈতিক আন্দোলন। বামপন্থী কিছু সংগঠনের পরোক্ষ মদত থাকলেও পুরোটাই সংগঠিত হয়েছে অরাজনৈতিক গণআন্দোলনের ধাঁচে। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের ব্যানারে আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ হলে এই পরিমাণ সাড়া মিলত না, সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। যাই হোক, সেই আর জি কর আন্দোলনও এখন স্তিমিত। রাজ্যের বিরোধীরা ফের ‘ইস্যুহীন’।

Advertisement

‘ইস্যুহীন’ বলেই পড়শি দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে ইস্যু বানিয়ে পথে নামতে হচ্ছে বিজেপিকে। আসলে ওপার বাংলার সংখ্যালঘুদের বিপন্নতায় রাজনৈতিক ফায়দা দেখছে বিজেপি। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসা ইস্তক বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণের যে চেষ্টাটা বিজেপি করে যাচ্ছিল, এতদিনে সেই প্রক্রিয়া গতি পেতে পারে বলে মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের নব্য নেতারা। সে কারণেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। একের পর এক বয়ান দিয়ে চলেছেন তিনি। ওপার বাংলার হিন্দুদের জন্য তাঁর ‘হৃদয় কাঁদছে’। সঙ্গে আরএসএস-সহ ধর্মীয় সংগঠনগুলিও রাস্তায় নেমে ‘হিন্দুদের সংঘবদ্ধ’ করার চেষ্টা করে চলেছে। সমান্তরাল ভাবে চলছে সমাজমাধ্যমের প্রচার। বিজেপি মনে করছে, ওপারের সংখ্যালঘুদের নিয়ে এপারে আবেগ রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান ছবিকে ‘বাংলার ভবিষ্যৎ’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই মেরুকরণ তীব্র হতে পারে। সেই অঙ্কই আপাতত একমাত্র ভরসা শুভেন্দুদের। আর কোনও জনমুখী ইস্যু, বা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিশেষ জায়গা তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। অতএব ইস্যুর এই দৈন্যদশায় বাংলাদেশই ভরসা বিজেপির।

সমস্যা হল, এক্ষেত্রেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুকৌশলে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছেন। গোটা ঘটনায় শুধু কেন্দ্রের পাশে থাকার বার্তা দেওয়াই নয়, রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর মতো দাবিও জানিয়ে ফেলেছেন। উলটো দিকে কেন্দ্রীয় সরকার মুখে হিন্দুত্বের কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইস্যুতে ঠুঁটো জগন্নাথ। শুধু লিখিত বিবৃতির খেলা ছাড়া কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ দিল্লির সরকারের তরফে আসেনি। ফলে শুভেন্দুরা যদি ভেবে থাকেন, হিন্দু ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে মমতাকে কোণঠাসা করবেন, তাহলে সম্ভবত ভুল করছেন। কারণ মমতা বাংলাদেশ নিয়ে যতটা মুখর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ততটাও নয়। 

এ তো গেল বিজেপির কথা। বাম এবং কংগ্রেসের সমস্যা আরও বড়। মানুষের ইস্যু তাঁদের হাতেও নেই। আর জি কর আন্দোলনকে বামপন্থীরা হাইজ্যাক করার চেষ্টা করলেও কার্যক্ষেত্রে সেটা হয়ে ওঠেনি। অরাজনৈতিক ব্যানার থেকে রাজনৈতিক ব্যানারে ফিরতেই সেই চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বামেদের সমস্যা হল, বাংলাদেশ ইস্যুতেও পুরোদমে বিজেপির মতো পথে নামতে পারছে না তারা। কারণ সরাসরি বিজেপির মতো ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি’ করা বামেদের পক্ষে সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তারা সরব হলেও সেই সঙ্গে সুকৌশলে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ভারত, প্যালেস্তাইনও। আসলে বামেদের হিন্দু ভোটের একটা বড় অংশ মোটামুটিভাবে হিন্দুত্বের নামে রামে সরে গিয়েছে, সংখ্যালঘু মনে যেটুকু জায়গা আছে, বাংলাদেশ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে সেটাও হাতছাড়া হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। এমনিতেই বাংলার সংখ্যালঘুরা এখন ভরসার জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছেন শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফলে বামেদের অঙ্ক সেই ‘শূন্যে’ গিয়েই থামছে।

কংগ্রেসের অবস্থা আরও খারাপ। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে অনেক দিন পর সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছে কংগ্রেস। ফলে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে বাড়াবাড়ি করে কোনওভাবেই সংখ্যালঘু মনে ‘নেতিবাচক’ ছাপ ফেলতে চাইছে না কংগ্রেস। নাহলে বাংলাদেশ ইস্যুতে কেন্দ্রের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে এতদিন পথে নেমে পড়া উচিত ছিল কংগ্রেসের। রাহুল গান্ধীরা নামেননি, বরং আদানির মতো ‘ক্লিশে’ হয়ে যাওয়া ইস্যুতে বাজার গরম করার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। স্বাভাবিকভাবেই প্রদেশ কংগ্রেস দিশেহারা। বাংলাদেশ ইস্যুতে পথে নামতে হবে? নামলেও লাভ হবে নাকি লোকসান? সেই সব জটিল অঙ্কে সংশয়াচ্ছন্ন শুভঙ্কর সরকাররা। প্রদেশ কংগ্রেসের সংশয়ের অবশ্য আরও কারণ আছে। তারা কতটা তৃণমূলের বিরোধিতা করবে, কতটা বিরোধিতা করলে ইন্ডিয়া জোটের ক্ষতি হবে না, বা আগামী দিনে বাংলায় জোটের রাস্তা খোলা থাকবে, সেসব অঙ্কও মাথায় রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিজেপি যদি ‘ইস্যুহীন’ হয়, বাম-কংগ্রেস তবে ‘দিশাহীন’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement