ফাইল ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার: তরুণী চিকিৎসকককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার (RG Kar Case) পর থেকে বিতর্কের মধ্যমণি প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ বহু। কোনও কারণে আর জি করের চৌহদ্দিতে পা দিলেই নাকি আগাম খাজনা’র কথা উড়ে বেড়াত। যারা বুঝত তারা ‘সিকন্দর।’ বাকিদের ঠাঁই হয়েছে হয় উত্তরবঙ্গে, নয়তো অকেজো করে রাখা হয়েছে। গত চারবছরে অন্তত তিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বাতিল হয়েছে। কারণ সেই সন্দীপ ঘোষ।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যত বেশি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হবে তত বেশি নতুন ওষুধ খোলা বাজারে আসবে। বহুজাতিক কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য কমবে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে গেলে মূল উৎপাদক সংস্থাকে দাম কমাতেই হবে। কিন্তু এই সরল অর্থনীতির তোয়াক্কা কে করে? এনআরএস বা এসএসকেএম হাসপাতালে যে ক্যানসারের ওষুধের ট্রায়াল হয়েছে, ঠিক ছিল আর জি করের ক্যানসার ওয়ার্ডের কিছু রোগীর উপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য দেশের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ‘ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া’র থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ক্যানসারের ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কলেজের এথিক্স কমিটির অনুমোদন পায়। এমনকী রোগী কল্যাণ সমিতিতেও ব্যাপক আলোচনার পর অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল ডা.সন্দীপ ঘোষ অনুমোদনে স্বাক্ষর করেননি। কেন করেননি? অভিযোগ, ‘খাজনা’ দেওয়া হয়নি। একটা নয়, অন্তত গুনে গুনে তিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন আটকে দেওয়া হয়েছিল। উলটে রোগী কল্যাণ সমিতি অথবা কলেজের শীর্ষ মহল থেকে অজুহাত খাড়া করা হয়, হাসপাতালের রোগীদের গিনিপিগ বানানো যাবে না।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রঞ্জন দাশগুপ্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষের কাছে দরবারও করেছিলেন। প্রথম ট্রায়ালটি তো হলই না। উলটে এক প্রবীণ বিশেষজ্ঞকে জেলায় বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানেই বিষয়টির ইতি ঘটেনি। সূত্রের খবর, সব তথ্য তিনি স্বাস্থ্যভবনে জানান। কিছুদিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যভবনে ফিরে আসেন। প্রায় একবছর হল তিনি প্রয়াত। কিন্তু প্রয়াত গবেষক চিকিৎসকের সেই উদ্যোগ এখনও মনে রেখেছে আর জি করের চিকিৎসক অধ্যাপকদের প্রায় সবাই। বস্তুত, বাকি দুটি মেডিক্যাল কলেজে ক্যানসারের তিনটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে। দিল্লিতে রিপোর্টও চলে গেছে। কিন্তু আর জি করের অবস্থা একই জায়গায়। উলটে রেডিওলজি বিভাগের যে ঘরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। রাতারাতি তা খালি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এমনকী পুলিশি হমকিও দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপকের কথায়, সেই একই দাবি, আগে খাজনা পরে ট্রায়াল। কিন্তু তিনটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি সেই কাজ করতে অস্বীকার করেছিলেন। তাই চার বছর ধরে কলেজ হচ্ছে। রোগী দেখা হচ্ছে। সুস্থ হচ্ছে। কিন্তু এনএমসি’র নিয়ম মেনে ট্রায়াল আপাতত বন্ধ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.