ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: বিরোধী পড়ুয়াদের বাগে আনতে হবে। তাই প্রয়োজনে যৌন হেনস্তার মতো মারাত্মক অভিযোগেও ফাঁসানো হত ইন্টার্ন বা পিজিটিদের। আর জি করের পরতে পরতে এমন অভিযোগ এখন প্রকাশ্যে আসছে।
কর্মস্থলে মহিলাদের যৌন হেনস্তা বন্ধ করতে ২০২১ আর জি করে কমিটি গঠন করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী এই কমিটির প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয় মহিলা অধ্যাপককে। নিয়ম বলছে, স্বচ্ছতা- নিরাপত্তার স্বার্থে এই কমিটিতে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ সদস্য হিসাবে থাকতেই পারবে না। কিন্তু সন্দীপ ঘোষের জমানায় সেসব নিয়মের অন্তর্জলী যাত্রা হয়েছিল। ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার প্রধান ছিলেন প্যাথোলজির অধ্যাপক ডা. অঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ১৪ জনের সদস্য কমিটির প্রথমেই জ্বলজ্বল করছে ডা.সন্দীপ ঘোষের নাম। দ্বিতীয় বির্তকিত উপাধ্যক্ষ ডা.সঞ্জয় বশিষ্ঠ। কমিটির ৭ নম্বরে ছিলেন সন্দীপের স্ত্রী ডা. সঙ্গীতা দাস ঘোষ। বস্তুত, এমন কমিটির সামনে ‘বেয়াড়া’ পড়ুয়াদের যৌন হেনস্তার অভিযোগে নোটিশ দিয়ে ডেকে পাঠানো হত। দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ চলত। অভিযোগ, কার্যত বিধস্ত হয়ে কিছু গ্র্যজুয়েট পড়ুয়া নতিশিকার করতে বাধ্য হয়েছে। বাকিরা কোনও বিষয়ে ফেল করেছে। অধ্যাপক অঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এই কমিটির প্রধান। এদিন বার বার তাঁর মোবাইলে ফোন করা হয়। মেসেজ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি।
ডা. অঞ্জলী বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর না দিলে বাকিরা কিন্তু সরব হয়েছেন। অভিযোগ যেসব ছাত্রদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করা হত, তাদের নামের তালিকা থাকত। অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এবং কতিপয় অধ্যাপকের ভরসার ছাত্রী ছিলেন। মূলত তাঁরাই এই অভিযোগ আনতেন ছাত্রদের বিরুদ্ধে। আর জি কর সূত্রে খবর,‘ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি’র সামনে সাজানো অভিযোগের সমর্থনে জোরদার সওয়াল করতেন ডা.আশিস পাণ্ডে, ডা. সৌরভ মাজি, ডা.প্রণয় মাইতির মতো হাউজ স্টাফ, ইন্টার্ন বা তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়ারা।
আবার উলটো ঘটনাও আছে। কোনও মহিলা চিকিৎসককে ‘সবক’ শেখাতেও ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি’কে হাতিয়ার করা হত। গত বছরের ২৭ মে এক মহিলা পিজিটি’র বিরুদ্ধে সহকর্মীদের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। কমিটিতে অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগ, মহিলা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিকে কমিটির সামনে হাজির হওয়ার আগে ‘সাইকোমেট্রি টেস্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কমিটির কয়েকজন সদস্য এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এই প্রসঙ্গে এসএসকেএমের ইন্সটিউট অফ সাইকিয়াট্রির অধিকর্তা ডা. অমিত ভট্টাচার্য বলেছেন, “কোনও ব্যক্তির সাইকোমেট্রি পরীক্ষার জন্য তার লিখিত অনুমতি দরকার। দ্বিতীয়ত এই পরীক্ষা করবেন কোনও সাইকিয়াট্রি। পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তাঁর মানসিক ভারসাম্য।” অভিযোগ, একজন তরুণী চিকিৎসকের ভবিষ্যৎ কার্যত নষ্ট হতে বসেছিল আর জি করের অপসারিত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের জমানায়।
আর জি করের অ্য়াকাডেমিক ভবনে এখনও বহুল পরিচিত নাম ডা. তনুশ্রী থাপা। নেপালের নাগরিক। নেপালের কোটায় আর জি করে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ পান। অভিযোগ, ‘বেয়াড়া’ পড়ুয়াদের নিয়ন্ত্রণে আনতে তনুশ্রী থাপা মাঝে মধ্যে অতি সক্রিয় হতেন। কলেজ অথবা হাসপাতালের যেসব জায়গায় সিসি ক্যামেরার নজরদারি নেই, এমন জায়গাকেই বেছে নেওয়া হত। মিথ্যে অভিযোগে সাব্যস্ত পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ ঝুলে থাকত সন্দীপ ঘোষের মর্জির উপর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.