অভিরূপ দাস: রিটায়ার করে গিয়েছেন। তাও ছাড়ছেন না আবাসনের দখল। কেউ কেউ আবার অন্যত্র ফ্ল্যাট কিনলেও পুরসভার আবাসন ভাড়া দিয়ে মোটা টাকা গুনছেন। কলকাতা পুরসভার আবাসনকে মৌরসিপাট্টা বানিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত পুরসভার কর্মীদের একাংশ। এদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) হুঁশিয়ারি, অবসরের পরও যাঁরা আবাসনের দখল ছাড়ছেন না তাঁদের বিরুদ্ধে কোর্টে যাওয়া হবে। আপিল করা হবে পেনশন বন্ধের। শুধু তাই নয়। আগামিদিনে এই ঝঞ্ঝাট মেটাতে নতুন নিয়ম আনছে পুরসভা।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, যাঁরা এই মুহূর্তে কর্মী আবাসনে রয়েছেন, তাঁরা অবসর নেওয়ার পর ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেবেন ওই বরোর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের হাতে। তিনি যদি ফ্ল্যাট দেখে ‘দখলমুক্ত’ সিগন্যাল দেন, তবেই অবসর গ্রহণ পরবর্তী সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাবেন ওই কর্মী। চালু হবে পেনশন। আবাসন দখল করে রাখার বিষয়টি মেয়রের দৃষ্টিগোচরে এনেছেন উত্তর কলকাতার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়। ওই ওয়ার্ডে ১৮ নম্বর উল্টোডাঙা রোড এবং ১৩২ নম্বর রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটে পুরসভার দু’টি কর্মী আবাসন রয়েছে। অভিযোগ, অনেকেই ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটের মতো আবাসন ভেঙেচুরে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। অবসর গ্রহণের পর তারা সে আবাসন ছাড়েননি। কেউ অন্য পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনলেও গ্রাম থেকে আত্মীয় বসিয়ে ভাড়া গুনছেন।
কাউন্সিলর মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, এঁদের জন্য যাঁরা বর্তমান কর্মী, তাঁরা ঘর পাচ্ছেন না। এদিকে অনেকে ভাড়াটে সাব টেন্যান্ট বসিয়েছেন। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে কর্মী আবাসনের সংখ্যা ১৪৭টি। পুরসভার নিয়মিত কর্মীরাই এখানে থাকার সুযোগ পান। যাঁরা থাকবেন তাঁদের কাছে পুরসভার পরিচয়পত্র থাকে। যে বরোতে যে কর্মী আবাসন রয়েছে সেই বরোর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররাই এই কর্মী আবাসনের দেখভাল ও মেরামত করেন। একাধিক কর্মী আবাসনে অনাহুতরা থাকলেও মেরামত করতে হচ্ছে পুরসভাকেই।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, কলকাতা পুরসভার হাতে এত উদ্বৃত্ত টাকা নেই যে, বছরের পর বছর বাইরের লোক এসে থাকবেন আর পুরসভা আবাসন রক্ষণাবেক্ষণ করে যাবে। এতদিন কলকাতা পুরসভার হাতে ডেটা স্ট্রাকচার ছিল না। তা চালু হতেই দেখা যাচ্ছে, একাধিক আবাসনে ঘর আটকে রয়েছেন ৮/১০ বছর অবসর গ্রহণ করা কর্মীরাও। মেয়র জানিয়েছেন, প্রতিটি আবাসন দখলমুক্ত করা হবে। যাঁরা নিয়মিত কর্মী তাদের থাকার বন্দোবস্ত করা হবে। যেগুলি দখল হয়ে রয়েছে। নোটিস দেওয়ার পরও খালি করছেন না অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা স্থানীয় থানার সাহায্য নিয়ে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়াররা অভিযান চালাবেন সেই কর্মী আবাসনগুলিতে।
অনেক জায়গায় এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার খালি করার পরও আবার গিয়ে দখল নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের হুঁশিয়ারি, যেখানে খালি করার পর আবার আবাসন দখল করা হচ্ছে। সেখানে দেখা হবে ওই আবাসন কার নামে নথিভুক্ত ছিল। সেই কর্মীর পেনশন বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করবে পুরসভা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.