অর্ণব আইচ: গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় কমছে অপরাধ। তুলনায় দেশের বড় শহরগুলিতে অপরাধের সংখ্যা বেশি। গত কয়েক বছরে শুধু দেশের অন্য শহরের তুলনায় কলকাতায় অপরাধের হার যে কম তাই নয়, বছরে বছরে কলকাতায় অপরাধের হারের গ্রাফ নিম্নমুখী। ফলে দেশের মধ্যে কলকাতা যে নিরাপদতম শহর, সেই তথ্য উঠে এল লালবাজারের সমীক্ষায়ও।
অপরাধ আরও কমানোর জন্য প্রত্যেক ১০০ বর্গমিটারে একেকটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর লক্ষ্যে লালবাজার। কয়েক বছরের মধ্যে শহরে সাড়ে ৩ হাজার নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা ও দেড়শো আধুনিক এএনপিআর সিসিটিভি ক্য়ামেরা বসাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। উল্লেখ্য, সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে রেড রোডের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ময়দানের গঙ্গাসাগর মেলা গ্রাউন্ডের নিরাপত্তায় বসানো হচ্ছে আরও ২৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা। তবে প্রচলিত অপরাধের সংখ্যা শহরে কমলেও সাইবার অপরাধ অথবা ব্যাংক জালিয়াতির মতো অপরাধের গ্রাফ কিছুটা উর্ধ্বমুখী।
সোমবার লালবাজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২১ সালে দিল্লিতে ২৩৪০টি, মুম্বইয়ে ৮৭৭, চেন্নাইয়ে ৬২৯, বেঙ্গালুরুতে ৫৪১টি ডাকাতি হয়। সেখানে কলকাতায় ডাকাতির সংখ্যা ছিল ২৩টি। গত বছর ডাকাতির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২১টি। ধর্ষণ, পণের জন্য বধূহত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মতো মহিলাদের প্রতি বড় ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে ২০২১ সালে দিল্লিতে হয়েছিল ১৪৪৬, মুম্বইয়ে ৪৩৩, চেন্নাইয়ে ৭৪, বেঙ্গলুরুতে ২৪৬টি মামলা। সেখানে ওই বছর কলকাতায় হয়েছিল ৩৪টি অপরাধ। গত বছর কলকাতায় হয়েছিল ৩৩টি মহিলাদের প্রতি অপরাধ। ২০২১ সালে দিল্লিতে ৪৫৪, মুম্বইয়ে ১৬২, চেন্নাইয়ে ১৬১, বেঙ্গলুরুতে ১৫৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে ২০২১ সালে কলকাতায় খুন হয় ৪৫টি। গত বছর কলকাতায় খুনের সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৩৪টি। কলকাতায় অপরাধের হার যে ক্রমে কমছে, সেই প্রমাণও মিলেছে। ২০১৮ সালে ১৫২.২, ২০১৯-এ ১৪১.৬, ২০২০ সালে ১২৯.৫ ছিল অপরাধের হার। ২০২১ সালে সেই হার কমে দাঁড়ায় ১০৩.৪। ওই সালে অপরাধের হার ছিল দিল্লিতে ১৮৫৯, চেন্নাইয়ে ১৩২৫.৩, মুম্বইয়ে ৪২৮.৪, বেঙ্গালুরুতে ৪২৭.২।
এখনও পর্যন্ত শহরজুড়ে রয়েছে পুলিশের আড়াই হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা। অপরাধ কমাতে ও ট্রাফিকের নজরদারির জন্য নির্ভয়া ফান্ডে আরও ৩৫০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। মূলত নারী নিরাপত্তায় স্কুল, কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, কাফে বা রেস্তরাঁর মতো যে জায়গাগুলিতে মহিলাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে অথবা মহিলাদের কেউ পিছু নিতে পারে, সেই জায়গাগুলিতে পরিকল্পিতভাবে বসানো হবে নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা। এখনও কলকাতায় রয়েছে ২৫টি আধুনিক অটোমেটিক নম্বর প্লেট রেকগনিশন (এপিএনআর) ক্যামেরা। চলন্ত গাড়ির নম্বরপ্লেট বা গাড়ির কোনও বিশেষ চিহ্ন চিহ্নিতকরণ ছাড়াও যে রাস্তা ধরে ‘টার্গেট’ গাড়িটি চলে গিয়েছে, সেই রুট বা রাস্তা ক্যামেরার মাধ্যমেই জানতে পারে পুলিশ। আরও ১৫০টি এই ধরনের আধুনিক ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে পলাতক গাড়ির রুট ধরা আরও সহজ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.