ফাইল ছবি।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পাঁচ বছরের ব্যবধানে রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যা বেড়েছে বয়সে নবীন বিধায়কের। এই তথ্য উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সাম্প্রতিকতম নথিতে। যে তথ্য অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং উৎসাহের বলে জানাচ্ছে বিধানসভার সব পক্ষের পরিষদীয় দল। তবে একইসঙ্গে আরও একটি তথ্য সামনে এসেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে বয়সে নবীনই হোক বা প্রবীণ, এই নতুন বিধায়কদের মধ্যে স্নাতকের সংখ্যার গড় মান কিছুটা কমেছে। কারণ কী? বিজেপির শংকর ঘোষের কথায়, “বিধায়কদের মধ্যে থেকে স্নাতকের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছাত্র রাজনীতি হারিয়ে যাওয়া।”
বিধানসভার সচিবালয় থেকে বিধায়কদের যে তথ্য নথিবদ্ধ হয়েছে তাতে ২০১৬ আর ২০২১-এর তথ্য মিলিয়ে দেখা গিয়েছে নবীন বিধায়কদের অংশিদারী তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। বিধায়ক পদে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম বয়সের মাপকাঠি ২৫ বছর। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও মাপকাঠি নেই। তথ্য বলছে, ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী বিধায়কদের অংশীদারি ২০১৬ সালে ছিল ১১ শতাংশ। সেখানে সপ্তদশ বিধানসভা তথা ২০২১ সালের জয়ী বিধায়কদের হিসাবে সেই অংশীদারী বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ। আবার ৪১ থেকে ৫৫ বছর বয়সী বিধায়কদের ২০১৬ সালে অংশীদারী ছিল ৩৭ শতাংশ, ২০২১ সালে সেই অংশীদারী বেড়ে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। সেখানে পরপর বছরগুলিতে ৫৫ থেকে ৭০ বছর বয়সী আবার সত্তরোর্ধ বয়সীদের অংশীদারী কমেছে। আবার বিধানসভায় মহিলা বিধায়কদের অংশীদারী আগের থেকে অনেক বাড়লেও ২০১৬ আর ২০২১-এ সেই অনুপাত একই আছে। মহিলা অংশিদারী ১৬ শতাংশ, পুরুষদের বাকি ৮৬ শতাংশ।
এর পরই সামনে এসেছে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য। দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিধায়কদের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণর সংখ্যা অনেক বেশি। আবার অষ্টম ও দশম শ্রেণি উত্তীর্ণর সংখ্যাও রয়েছে অনেক। শতাংশের হিসাবে ২০১৬ সালে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাসের হার ছিল ৩২ শতাংশ, সেখানে ২০২১ সালে তা ৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৮ শতাংশ। এখানেই স্নাতক আর স্নাতকোত্তর যোগ্যতার বিধায়কের সংখ্যা কমেছে। ২০১৬ সালের বিধায়কদের মধ্যে স্নাতক ছিলেন ৪৩ শতাংশ আর ২০২১ সালে তা ৪ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৯ শতাংশ। স্নাতকোত্তর কমেছে ২ শতাংশ। ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর বা তার বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বিধায়কের হার ছিল ২৫ শতাংশ, চলতি বিধানসভার মেয়াদে তা ২ শতাংশ কমে হয়েছে ২৩ শতাংশ। নবীন বিধায়কদের অংশীদারী উচ্ছ্বাসের বলে জানালেও পরিষদীয়মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কারও শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকার মানে কখনওই এটা নয় যে, দশম বা দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ কোনও বিধায়ক এলাকার উন্নয়নে খারাপ কাজ করবেন বা তিনি বিধানসভার অধিবেশনে পরিষদীয় রীতিনীতি জেনে ভালভাবে অংশ নিতে পারবেন না।” তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, “অনেকেই হয়তো বলবেন বিধানসভায় লেখাপড়া একটু বেশি করে জেনে এলে ভালই হয়। তবে এটাও ঠিক যে, অনেক কম লেখাপড়া জানা ছেলে বা মেয়েও বিধানসভা সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য রাখেন।”
সেক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা শূন্য। অথচ দলিত সাহিত্যে তাঁর একের পর এক লেখা তাঁকে প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছে। জাতীয় ও রাজ্য মিলিয়ে পেয়েছেন ৪২টি পুরস্কার। অর্থাৎ শিক্ষাগত বা পুঁথিগত বিদ্যা শূন্য থাকার পরও বিদ্যাশিক্ষায় তাঁর অবদান সাহিত্যজগতে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এই অবদানকে মান্যতা দিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিধানসভায় নিয়ে এসেছেন। ব্যাপারীর কথায়, “বরিশাল থেকে এপার বাংলায় এসে পথে পথে ঘুরেছি। রিফিউজি ক্যাম্পে থেকে বড় হয়েছি। খাওয়ার ঠিক ছিল না, পড়ব কী!” সেইসব বাস্তব জীবনের ছবিই তঁার সব লেখায়। বিধায়কের সংযোজন, “আমি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত।” বামপন্থী ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা বিজেপির মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ আরেকটি দিক মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, বিধায়কদের মধ্যে থেকে স্নাতকের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছাত্র রাজনীতি হারিয়ে যাওয়া। শংকরের কথায়, “ছাত্ররাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক সময় রাজ্য রাজনীতিতে আসতেন। সেই প্রবণতা কমে যাচ্ছে ছাত্রভোট না হওয়ার ফলে। এটাই জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণ এবং সামগ্রিক রাজনীতিতে এর ছাপ পড়ছে। তাই ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে বৃহত্তর রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমন বিধায়কের সংখ্যা প্রায় কমেই যাচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.