অর্ণব আইচ: মধ্য কলকাতায় জঙ্গি অভিযান!
ছাদের উপর দাঁড়িয়ে স্নাইপার বাহিনী। নিষ্পলক চোখ। লক্ষ্য স্থির উল্টোদিকের বাড়ির জানালায়। হঠাৎ গুলির আওয়াজ। ফট, ফট শব্দ করে রাইফেলের নল থেকে বেরিয়ে আসছে বুলেট। যা নিরন্তর ভেদ করে চলেছে জানালার কাচ। ঝনঝন শব্দে গুঁড়িয়ে পড়ছে নিচে।
না। জঙ্গি অভিযান নয়। এটা অপারেশন বাগরি। বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ৮৪ ঘণ্টা পরও যখন ধোঁয়া বের হওয়ার কোনও উপায় নেই, তখন এই দাওয়াই দিল ডিএমজি। কমব্যাট ও ডিএমজি-র টিম সঙ্গে নিয়ে এল রবার বুলেট গান। সঙ্গে রবার বুলেট। শক্ত রবার দিয়ে তৈরি এই বুলেট আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে উন্মত্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। বুলেট রবারের হলেও যথেষ্ট শক্ত। মেহতা বিল্ডিংয়ের ছাদের উপর একটি বিশেষ জায়গায় দাঁড়িয়ে শুরু হল ‘ফায়ারিং’। রবার বুলেট কাচ ভাঙতেই গলগল করে ভিতর থেকে বের হতে শুরু করল কালো ধোঁয়া। ততক্ষণে দমকলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুন আর ছড়াচ্ছে না। আগুন আয়ত্তে এলেও এখনও নেভেনি। আগুন নেভানোর জন্য লড়াই চালাচ্ছে দমকল ও ডিএমজি। এদিন এই লড়াইয়ের সময়ই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দমকলের দুই আধিকারিক। তাঁদের অক্সিজেন দেওয়া হয়। অসুস্থ হন সিভিল ডিফেন্সের দুই কর্মীও।
[বাগরি মার্কেট অগ্নিকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা]
মঙ্গলবার রাতেই দমকলকর্মীদের মনে হয়েছিল, নিভে গিয়েছে আগুন। কিন্তু গভীর রাতে হঠাৎই আগুন জ্বলে ওঠে তিনতলার একটি ঘর থেকে। তা নেভানো শুরু হয়। এদিন সকাল থেকেও দমকল কর্মীদের এক কথায় নাজেহাল করে ছেড়েছে ‘পকেট ফায়ার’। সারাদিন ধরেই কখনও চারতলা, আবার কখনও পাঁচ বা ৬ তলা থেকে বের হতে শুরু করেছে ধোঁয়া। হঠাৎই ক্যানিং স্ট্রিট ও পুরো বাগরি মার্কেট ভর্তি হয়ে উঠেছে ছাইচাপা আগুনের কালো ধোঁয়ায়। সকাল থেকেই ডিএমজি ও দমকল থার্মাল ক্যামেরা নিয়ে ঘুরেছে সারা বাগরি মার্কেট। দেখেছে কোন জায়গার তাপমাত্রা কত। বিকেলে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, যে ব্যবসায়ী এখনও দোকানের শাটার খোলেননি, তাঁরা যেন ডিএমজি-র সঙ্গে ভিতরে যান। সেই শাটার খুলে লুকানো আগুনের সন্ধান চালানো হবে। না হলে সেই শাটার ভেঙে ফেলা হতে পারে। জানা গিয়েছে, পাঁচতলার একপ্রান্তে ৭০০ বর্গফুটের একটি গুদামে ছিল প্রচুর প্লাস্টিকের সামগ্রী। ওই গুদামে আগুন জ্বললেও ধোঁয়া বের হচ্ছিল না। সেই ধোঁয়া বের করতেই শেষ পর্যন্ত রবার বুলেট ‘ফায়ার’ করা হয়।
[বাগরিতে অগ্নিকাণ্ড কি পরিকল্পিত নাশকতা? সিসিটিভি ফুটেজ ঘিরে রহস্য]
বাগরি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর অনেকটাই যেন থমকে গিয়েছিল বড়বাজার। এদিন এজরা স্ট্রিট থেকে ক্যানিং স্ট্রিট হয়ে আমড়াতলা লেনের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেছেন বহু মানুষ। মেহতা বিল্ডিং ও ক্যানিং স্ট্রিটের অন্য বাজারগুলির সামনের দিকের দোকান বন্ধ থাকলেও খুলেছে পিছনের দিকের দোকানগুলি। শুরু হয়েছে বিক্রিবাটা। কিছুটা যেন হাঁফ ছেড়েছে বড়বাজার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.