সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোট দিতে গিয়ে হেনস্তার মুখে পড়তে পারেন। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করে চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানালেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ওই চিঠিতে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বেহালা পশ্চিম বিধানসভার যে বুথে তিনি ভোট দেন সেখানে ভোট দিতে গেলে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় তাঁকে নিগ্রহ করতে পারেন। কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার এবং মহিলা পুলিশ মোতায়েন করার আবেদনও করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে শনিবার রত্নাদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘শোভনবাবু ভাল পলিটিশিয়ান। উনি ভাল করেই জানেন কীভাবে খবরের শিরোনামে থাকতে হয়। তৃণমূলের তরফ থেকে আমাকে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই ভোটের দিন আমি খুব ব্যস্ত থাকব। শোভন চ্যাটার্জিকে নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। উনি ভোট দিন, বাড়িতেও আসতে পারেন। আমার বাড়ির দরজা সবসময় খোলা। উনি তো আমার কাছে মৃত।’
রত্নাদেবীর এমন বক্তব্য জানার পর এদিন সন্ধেয় টেলিফোনে শোভনবাবু বলেন, ”আমাকে মৃত বলা হয়েছে, শুনে সবচেয়ে দায়মুক্ত হলাম। সম্পর্কটা মৃত, তাই তো ডিভোর্স ফাইল করেছি। সম্পর্কটা যদি মৃতই হয় তাহলে রেস্টোরেশনের মামলা লড়ছেন কেন? আদালতে গিয়েছেন কেন? বিষয়টি বিচারাধীন, তাই এই নিয়ে আর মন্তব্য করতে চাইছি না।”
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠির প্রথম অংশে শোভনবাবু জানিয়েছেন, স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের মামলা চলছে এবং দৈনন্দিন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি অনেক দিন ধরেই আলাদা থাকছেন। নিজের বাড়িও আপাতত তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। শোভনবাবু আরও জানিয়েছেন যে, বেহালার মহারানি ইন্দিরা দেবী রোডে তাঁর যে বাড়ি, সেখানে এখন তাঁর স্ত্রী রত্না থাকছেন এবং যে বুথে তাঁকে ভোট দিতে যেতে হবে, সেটি ওই বাড়ির প্রায় লাগোয়া। চিঠির অপর অংশে তিনি লিখেছেন, বিশ্বস্ত সূত্র মারফত তাঁর কাছে খবর এসেছে রবিবার তিনি ভোট দিতে গেলে তাঁকে হেনস্তা করা হতে পারে। এমনই পরিকল্পনা করেছেন তাঁর স্ত্রী রত্না ও তাঁর সঙ্গীরা। তাঁর অভিযোগ, আগেও নাকি তাঁকে একাধিকবার হেনস্তা করেছেন স্ত্রী এবং সঙ্গীরা।
শোভনবাবুর এই চিঠি এবং তাঁর অভিযোগ প্রসঙ্গে রত্নাদেবীর বক্তব্য ‘শোভনবাবু ভোট দিতে এলে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু যদি কোনও সঙ্গিনীকে নিয়ে তিনি ভোট দিতে আসেন তাহলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। এবং তার দায় কিন্তু নিতে হবে শোভনবাবুকেই।” রত্নাদেবীর আরও হুঁশিয়ারি, ‘তিনি একা আসুন আমার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু সঙ্গিনী হিসাবে যদি কেউ আসে তাহলে আমার এলাকায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কিন্তু তাঁকেই নিতে হবে। যেমন পরিস্থিতি ঘাটালে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে হয়েছিল তেমনটা হতে পারে।’ কিন্তু এই সঙ্গিনী কে? বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়? তাঁর উত্তর, ”সবাই জানে ওই একজন মহিলার সঙ্গেই তিনি থাকেন। আমি তাঁর কথাই বললাম।’
আর এই ‘সঙ্গিনী’কে নিয়ে ভোট দিতে আসার প্রসঙ্গ তুলতে শনিবার শোভনবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ”বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি কখনওই আমার সঙ্গিনী হিসাবে ট্রিট করিনি। এভাবে তাঁকে অপমান করার অধিকার কারও নেই। তিনি আমার বিপদের বন্ধু। সবসময় তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সহযোগী ও বন্ধু হিসাবে থেকেছেন। আমি নির্দ্বিধায় সেকথা বলতে পারি। আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি উনি আমার বিপদের বন্ধু। আমি এই স্ট্যান্ড কখনও অস্বীকার করিনি। তাই যে কঠিন সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি তার থেকে কখনও পিছপা হইনি।” তাঁর আরও বক্তব্য, ”শালীনতার সব সীমা ছাড়িয়ে মন্তব্য করছেন। সমস্ত বিশ্বাসযোগ্যতার মৃত্যু ঘটিয়ে বিপদ ডেকে এনেছেন উনি। যে সম্পর্ক উনি করে এসেছেন, সেটা সামনে থেকে বলার সাহস দেখাননি। আমি কিন্তু কখনও কিছু অস্বীকার করিনি। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও আমার সঙ্গিনী ছিলেন না। উনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি সেই বন্ধুত্বকে ঢাকবার চেষ্টা করিনি, করব না।”
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রত্নাদেবীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ”শোভনবাবু মজা করে একবার বলেছিলেন, রত্না বৈশাখী ফোবিয়ায় ভোগে। এটা ভেবেই আশ্বস্ত হলাম যে শোভনবাবু ওনার কাছে মৃত হলেও আমি সজীব। ওএই বাড়িটি শোভনবাবুর এবং আমাকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়িতে যাওয়ার সাহস উনি রাখেন। পর্ণশ্রীর মানুষের বক্তব্য রত্নার মুখ দিয়ে আমি শুনতে রাজি নই। কে ভোট দেবে তা নিয়ে সেখানকার মানুষের বক্তব্য তাঁদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য বলে, ওঁর এই গুন্ডামির ভাষা শুনতে আমি অভ্যস্ত নই।”
রত্নাদেবী এদিন বলেন, ”শুধু ভোট দিতে কেন, বেহালার পর্ণশ্রীর বাড়িতেও শোভনবাবু আসতে পারেন। গত দুবছর ধরে বহুবার তাঁকে আমি বাড়িতে আসতে বলেছি। তিনি আসেননি। উনি বাড়িতে আসুন, এসে বেডরুমে বিছানার দখল নিয়ে নিন। আমার কোনও আপত্তি নেই।”
রত্নাদেবীর এমন বক্তব্য শুনে শোভনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ”এধরনের মন্তব্য অত্যন্ত অশালীন। এর কোনও উত্তর আমি দেব না। শুধু এটুকু বলতে চাই, বাড়ি আমার। আমি ইট-কাঠ-পাথর-রক্ত জল করে সেই বাড়ি তৈরি করেছি। এখন সেই বাড়িতে অবস্থান করতে ওনার দ্বিধা হচ্ছে না? আমি পর্ণশ্রীতে জন্মেছি। সেখানে আমি ছিলাম, আছি। সেখানকার মানুষ, ইট-কাঠ শোভন চট্টোপাধ্যায়কে চেনে। কিন্তু রত্মাদেবী ও তাঁর পরিবার আমার পরিচয়েই পরিচিত হয়েছে। আমার পরিচয়েই ওর পরিচয় হয়েছে। ‘মৃত মানুষের’ শ্রাদ্ধ করে নিজের পরিচয় উনি এগোন।”
শেষে শোভনবাবু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অতি পরিচিত একটি গল্প এ প্রসঙ্গে শুনিয়েছেন। ”বঙ্কিমবাবুকে একবার, বাংলার পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছিল এক সাহেবের কাছে। সাহেব তাঁকে বিপদ ও আপদ সম্পর্কে জানতে চান। বঙ্কিমবাবু বলেন, একবার নদীতে ঝড়ে বড় বড় ঢেউয়ের মাঝখানে তিনি পড়ে গিয়েছিলেন। সেইটা ছিল বিপদ। আর তাঁকে এক সাহেবের সামনে তাঁর বাংলা জ্ঞানের প্রমাণ দিতে হচ্ছে, এটাই হল আপদ। এরপরই শোভনবাবুরপ মন্তব্য, আমার দুঃখ হয়। আমি ওঁকে বিয়ে করে আপদ হিসাবে নিয়ে এসেছিলাম।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.