ফাইল ছবি।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রেশন দোকানে আসল ‘স্টক’ কত, খাদ্যদপ্তর আর ডিলারের কাছে থাকা তথ্যের ফারাক উসকে দিল নতুন বিতর্ক। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্যদপ্তরের কাছে যা কার্যত বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার জেরে অপর্যাপ্ত রেশন বিলির অভিযোগে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। তথ্যের এই গরমিলে নতুন করে অশনি সংকেত দেখছেন ডিলাররা। তাঁরা আঙুল তুলছেন দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশের দিকে।
পালটা আধিকারিকরা বলছেন, দপ্তর থেকে এক চুল ভুল পাঠানোর কোনও জায়গা নেই। সরকারি নিয়ম ধরে একেবারে ইঞ্চি মেপে স্টকের হিসাব পাঠানো হয়। সেই তথ্য ডিলারদের পাশাপাশি ফোন বার্তায় গ্রাহকদেরও পাঠানো হয়। তাঁদের প্রশ্ন, যে প্রক্রিয়ায় ডিলারদের কাছে রেশন সামগ্রী যায়, তার এক চুল কম বা বেশি গ্রাহকের কাছে গেলে বাকি অংশ ডিলারের কাছেই থাকবে। সেখানে কোনও ডিলার গরমিল করতে পারবেন না। কারণ কোনও ডিলারের ‘স্টক ক্লিয়ার’ না হলে তার তথ্যও দপ্তরের আইটি সেলে চলে যায়। পরের মাসে ঠিক ওই অংশটুকুই বাদ দিয়ে বাকি স্টক পাঠানো হয়।দপ্তরের এই আইটি সেলের দিকেই আঙুল তুলছেন ডিলাররা।
তাঁদের অভিযোগ, আইটি সেলের তথ্যেই ভুল থেকে যাচ্ছে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে একই সঙ্গে গ্রাহক ও ডিলারকে। কিছু উদাহরণ তুলে ধরছেন ডিলাররা। কলকাতার কাছে শ্যামনগরের একটি রেশন দোকানের সম্প্রতি একটি হিসাব সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, সন্ধেয় দোকান বন্ধ করার সময় সেখানে ‘ক্লোজিং স্টক’ ছিল ৩০০ কুইন্টাল। অথচ, পরদিন সকালে ‘ওপেনিং স্টক’ দেখিয়েছে ৮০০ কুইন্টাল। প্রশ্ন উঠেছে, ডিলারের কাছে ওই ‘স্টক’ না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে দপ্তর থেকে আসা বার্তায় ‘ওপেনিং স্টক’-এ এত ফারাক হল। গ্রাহকও সেই হিসাব দেখে রেশন তুলতে গিয়ে তথ্য আর বাস্তবে গরমিল পেয়ে ক্ষোভ দেখালেন। ডিলারদের সংগঠন ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর দাবি, “গোলমালটা দপ্তরের আইটি সেলেই। সেই কারণেই প্রকৃত ‘স্টক’-এ ফারাক থাকছে। তাতেই গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, “এই গোলমালটা দেখার দায়িত্ব বা ঠিক করার দায়িত্ব তো দপ্তরের। অথচ আমরা গ্রাহকদের প্রশ্নের মুখে পড়ছি।”
এর পালটা দপ্তরের আধিকারিকদের সাফ বক্তব্য, ডিলারদের দাবি কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এনএফএসএ বা আরকেএসওয়াই যে কার্ডেই হোক, একজন গ্রাহকের জন্য বরাদ্দ সামগ্রী সবসময় ডিলারকে আগে পাঠিয়ে তা গ্রাহককে জানানো হয়। ডিলার যদি কারচুপি করেও তা দপ্তরের আইটি সেলের তথ্যে ধরা পড়বে। কোনও গ্রাহক ধরা যাক মাথাপিছু ৫ কেজি চাল পান। ডিলার সেই চালের থেকে কম সামগ্রী তাঁকে দিলেন। কিন্তু গ্রাহক রেশন তোলার পর সেই তথ্যও সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে দপ্তরের কাছে। ফলে ডিলারকে পরের মাসের সম পরিমাণ স্টক আর দেওয়া হবে না। তবে এর মাঝেও দপ্তরের আইটি সেলকে ফাঁকি দিয়ে চোরাস্রোতের মতো কারচুপি চলছে বলে খবর আসছে দপ্তরের কাছে।
অভিযোগ, ডিলার গ্রাহককে বুঝিয়ে কিছু সামগ্রী নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছেন। গ্রাহকও বিশেষ আপত্তি করছেন না। কিন্তু আইটি সেলের তথ্যে সেই হিসাব দেখানো হচ্ছে না। এখানেই সরষের মধ্যে কিছু ভূত রয়েছে বলে অভিযোগ। তেমন হলে সরাসরি ওই দোকানে রেড হবে বলে জানাচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তবে তাঁর আবেদন, “গ্রাহককে আগে সচেতন হতে হবে। রেশন যাঁর সত্যিই দরকার, তাঁকে নিজের অধিকার বুঝে নিতে হবে। আর যদি তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানান, তবে সেই দোকানে দপ্তর রেড করবে।” তাঁর কথায়, “এখন তো অনলাইনেও অভিযোগ জানানো যায়। প্রকাশ্যে অভিযোগ জানানোয় সমস্যা থাকলে দপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে অভিযোগ জানান গ্রাহক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.