অর্ণব আইচ: ১০৯টি জাল সরকারি স্ট্যাম্প ও সিল ব্যবহার করে রেশন বন্টন দুর্নীতি। ধৃত চাল ও গমকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের মিলে তল্লাশি চালিয়ে রেশন দপ্তর থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এসেনসিয়াল কমোডিটিস সাপ্লাই কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর জাল স্ট্যাম্প ও সিল উদ্ধার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। বাকিবুরের ডায়েরি ও রেজিস্ট্রার খাতা থেকে মিলেছে দুর্নীতির বহু তথ্য। তদন্তে এই দুর্নীতি যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই তথ্যও এসেছে ইডির হাতে।
ইডির দাবি, রেশন বন্টন দুর্নীতির কোটি-কোটি টাকা দুবাইয়ে বাইকের ব্যবসায় বিনিয়োগ করছিল বাকিবুর। এমনকী, দুবাইয়ে বিলাসবহুল পানশালায় বিনিয়োগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। প্রায়ই সে মধ্য প্রাচ্যে যেত। এই অক্টোবরেও তার দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। প্রায় ৫১ কোটি টাকা বাকিবুর ভুয়া শেয়ারে বিনিয়োগ করে বলে ইডির দাবি। গত শনিবার ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ইডি। দু’দিন হেফাজতের পর সোমবার তাকে ব্যাঙ্কশালে ইডির বিশেষ আদালতে তোলা হয়। তাকে হেফাজতে রাখার আবেদন জানান ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযুক্তর আইনজীবী বৃহস্পতিবার তার জামিনের আবেদন করতে চান বলে জানান। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বাকিবুরকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
২০২০ সালে নদিয়া থেকে ৭৬২ কিলো কালোবাজারির আটা উদ্ধারকে কেন্দ্র করেই রাজ্য পুলিশ এই চক্রের সন্ধান পায়। নদিয়ার তিনটি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। অভিযোগ ওঠে, কিছু ধান ও মূলত রেশনের গম বাকিবুরের চালকলে পাঠাতেন ডিলাররা। কিন্তু ২০ থেকে ৪০ শতাংশ গম সরিয়ে ফেলে তা সরকারি ছাপ দিয়েই কালোবাজারিতে বিপুল টাকায় বিক্রি করা হত। উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে রেশনের আটা কেনাবেচার হিসাব রয়েছে। কোনও অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও রেশনের শস্য বাইরে বিক্রি করত সে। এ ছাড়াও বেশ কিছু রেজিস্ট্রার খাতা উদ্ধার হয়েছে, যাতে ডিস্ট্রিবিউটারদের টাকা দেওয়ার হিসাব রয়েছে। তাতে মিলের মালিক ও ডিস্ট্রিবিউটারদের আঁতাতের প্রমাণ মিলেছে। এভাবে কয়েক কোটি টাকা সরানো হয়।
১০৯টি ভুয়া স্ট্যাম্প ও সিল ব্যবহার করে ইচ্ছামতো গম পাচার করে বাকিবুর। পাচারের বিপুল টাকা নগদে আসে বাকিবুরের হাতে। বিভিন্ন সংস্থা ও স্ত্রী-সহ পরিবারের লোকেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও পাচার করা হয় রেশন বন্টন দুর্নীতির টাকা। মোট ৬টি সংস্থার নামে ভুয়া শেয়ার প্রিমিয়ামের নামে মোট ৫০ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫০ টাকা পাচারের প্রমাণ ইডির হাতে এসেছে। ইডি জেনেছে, গত ২০১৯ সাল থেকেই পরিবার নিয়ে বাকিবুর দুবাইয়ে যায়। বুধবারই তাদের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। যদি বাকিবুর জামিন পায়, তবে সে বিদেশে পালাতে পারে বলে আদালতে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.