কৃষ্ণকুমার দাস: লকডাউনের সময় রেশন কার্ড বা ফুড কুপন আছে এমন প্রতিটি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে চাল-গম দিতে বাধ্য ডিলাররা। যদি কোনও ডিলার রেশন দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করেন তবে অভিযোগ জানালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে বৈঠকের পর শনিবার একথা জানিয়েছেন কলকাতার মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আরকেএসওয়াই-১ শ্রেণির রেশনের জন্য যে ১৬ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন তাঁরা নতুন কার্ড না পেলে ‘ফুড কুপন’ দিয়েও বিনামূল্যে মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল-গম পাবেন। ডিলাররা হয়রান করলে কলকাতায় ব্যুরো অফিস ও জেলায় জেলাশাসক, রেশনিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেবে খাদ্য দপ্তর। তবে পুরমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, কিছু ডিলার নতুন তালিকাভুক্ত কার্ডে রেশন দেওয়া নিয়ে টালবাহানা করছেন। প্রয়োজনে ওইসব গরিব মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন মেয়র।
করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের একজন মানুষও অভুক্ত থাকবেন না বলে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ১ এপ্রিল থেকে রেশন দেওয়া শুরু হয়েছে। রেশন দেওয়া এবং খাবারের পরিমাণ নিয়ে অনেক জেলায় অশান্তি হয়েছে। একমাসের চাল-গম একসঙ্গে গ্রাহকদের দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেও ডিলাররা অনেকে তা মানছেন না। বস্তুত খাদ্যের পরিমাণ কম দেওয়া নিয়েই হুগলি ও মুর্শিদাবাদে প্রথম দিনেই বড় অশান্তি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এদিন খাদ্যমন্ত্রী জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সব ডিলারকে মানতেই হবে। খাবারের কোনও অভাব নেই, সমস্ত গরিব মানুষকে খাবার পৌঁছে দেওয়া ডিলারদের দায়িত্ব। খাদ্যদপ্তর নজর রাখছে, আর কোথাও কোনও অশান্তি নেই।” অনেক মানুষ মাসের পর মাস রেশন তোলেননি। কিন্তু এখন মুখ্যমন্ত্রী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে চাল-গম বিতরণের ঘোষণা করায় বহু মানুষ কাউন্সিলর ও বিধায়কদের কাছে ছুটছেন ফের নিষ্ক্রিয় রেশন কার্ড সক্রিয় করতে। তাই কার্ড রিনিউ নিয়ে নতুন সংকট শুরু হয়েছে।
খাদ্য দপ্তর পাঠিয়ে দিলেও লকডাউনের কারণে পোষ্ট অফিস বন্ধ থাকায় ডাকযোগে এখনও অধিকাংশ জায়গায় আরকেএসওয়াই-১ কার্ড পৌছায়নি। কিন্তু যাঁরা আবেদন করেছিলেন তাঁদের প্রায় সবাইকে রেশন দেওয়ার জন্য নথিভুক্ত করা হয়ে গিয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন। বৈঠকে ছিলেন খাদ্যসচিব মনোজ আগরওয়ালও। এদিন খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে পুরভবনে এসে ‘টক টু মেয়র’ কর্মসূচিতে যোগ দেন ফিরহাদ। এদিন এক ঘণ্টার এই পরিষেবায় অধিকাংশ নাগরিকই মেয়রকে ফোন করে রেশন কার্ড সংক্রান্ত নানা দুর্ভোগের অভিযোগ জানান।
হালতুর বিমল ঘোষ, বেলেঘাটার শ্যামলী চৌধুরি, কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের অরিজিৎ সেন, কাকুড়গাছির মিঠু দাসের মতো অনেকেই আরকেএসওয়াই-১ কার্ডে চাল-গম না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ জানান মেয়রকে। একই অভিযোগ জানিয়ে ফিরহাদের কাছে ফোন আসে নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়ার জেলার। সবাইকে পুরমন্ত্রী জানান,“মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে রেশন কার্ড বা ফুড কুপন আছে এমন সমস্ত গরিব মানুষকে চাল-গম দেওয়া হবেই। মঙ্গলবার থেকে সবাই খাবার পেয়ে যাবেন। ১০ এপ্রিলের পর ফুড কুপনে খাবার পাওয়া যাবে।” এদিন পুরমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী দু’জনেই রেশন তোলার সময় দোকানে এসে লকডাউনের নিয়ম মেনে তিন ফুট দুরে দুরে লাইনে দাঁড়াতে সবার কাছে আবেদন করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.