অভিরূপ দাস: ঝরনার মতো জল পড়ত নাক দিয়ে। মাথা নিচু করে বসে থাকা দায়। নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না স্বাভাবিকভাবে। বিরল এক অসুখে আক্রান্ত ছিলেন হুগলির বলাগড়ের গায়ত্রী হালদার (৩০)। টানা তিনঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে অবশেষে মুক্তি পেলেন তিনি। গায়ত্রীর পরিবার জানিয়েছে, শুশ্রূষার প্রয়োজনে অনেক চিকিৎসকের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয়েছে। কিন্তু রোগটাই ধরতে পারছিলেন না। গ্রামের বদ্যি বলেন সর্দি হয়েছে। টানা একবছর সর্দির ওষুধ খেয়েও কোনও লাভ হচ্ছিল না। অবশেষে শাপমুক্তি হল কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই ফিমেল ইএনটি ওয়ার্ডে জটিল অস্ত্রোপচারে নাক থেকে মাংস পিণ্ড বের করলেন ইএনটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সার্জন ডা. পি কে হাজরা।
শনিবার টানা তিনঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর নাক থেকে বেরিয়ে এসেছে একমুঠো মাংস। কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছিল?
[দাঁড়িয়ে থাকা কন্টেনারে ধাক্কা গাড়ির, দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে মৃত ১]
ডা. হাজরা জানিয়েছেন, নাক দিয়ে সবসময় জল পড়ত রোগীর। রাতে বালিশ ভিজে যেত। শীত-গ্রীষ্ম কখনওই নাক থেকে জল পড়ার সমস্যা মিটতো না। অল্প জ্বর থাকত সবসময়। এমন অসুখ ধরতে অপারগ গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার। মাংসপিণ্ড আকারে এতটাই বেড়ে গিয়েছিল বাইরে থেকেও দেখা যেত তা। নাকের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে বাইরে ঝুলে থাকত। লজ্জায় কোথাও যেতে পারতেন না রোগী। ডা. হাজরার কথায়, “এমন মাংসপিণ্ডের জন্য স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে থাকাও দায়। এ অসুখে অস্বস্তি মারাত্মক।” আর পাঁচজনের মতো বসে খাবার খেতে পারতেন না তিনি। মাথা নিচু করে খাবার খেতে গেলেই যে জল পড়ত খাবারের থালায়। অগত্যা মাথা উঁচু করে খাবার গিলতে হত।
[উল্টোডাঙায় পোকার কামড়ে শিশুর মৃত্যু, শহরে স্ক্রাব টাইফাসের আতঙ্ক]
নাকের দুই পাশে দুটি ছিদ্রযুক্ত কক্ষ আছে। এই কক্ষ দুটির মাঝখানে একটি দেওয়াল থাকে। একে সেপ্টাম বলা হয়। পেল্লায় এই মাংসপিণ্ড ঢেকে দিয়েছিল সেপ্টামও। এনআরএসের অপারেশন থিয়েটারে অত্যন্ত সন্তর্পণে দেওয়াল কেটে মাংসপিণ্ড বাইরে নিয়ে এসেছেন ডা. হাজরা। তবে এ অস্ত্রোপচার অন্যান্য অপারেশনের তুলনায় অনেকটাই জটিল। এন্ডোস্কোপিক লেন্সে চোখ রেখেই সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার সারতে হয়। নাকের মধ্যে সিল্কের ফাঁস বেঁধে বেঁধে বের করে আনা হয়েছে দৈত্যাকার ওই মাংসপিণ্ড। আপাতত রোগিনীকে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এনআরএস হাসপাতালের ইএনটির সার্জন ডা. পি কে হাজরা টানা তিন ঘণ্টার চেষ্টায় বের করে এনেছেন ওই মাংসপিণ্ড। গায়ত্রী দেবীর স্বামী মানিক হালদার ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.