হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রতিমা বাগ
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চার মাসেরও বেশি আগে গর্ভে সন্তান এসেছিল। কিন্তু, তিনি বুঝতে পারেননি। বুঝবেনই বা কী করে? গর্ভস্থ ভ্রূণ তো যেখানে থাকার কথা সেখানেই ছিল না! জরায়ুর বদলে তার ঠাঁই হয়েছিল পাকস্থলী, লিভার ও অন্ত্রের মাঝখানে।
দীর্ঘদিন ধরে পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন হাওড়ার প্রতিমা বাগ। কিছু খেলেই বমি বমি লাগত। কিন্তু, তাঁর অসুখটাই ধরতে পারছিল না কেউ। এই সমস্যা নিয়েই গত বৃহস্পতিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হন তিনি। প্রথমটায় চিকিৎসকরা ভাবেন হয়তো টিউমার। প্রতিমার পেটে কী হয়েছে তা জানতে আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হয়। পরে হয় ইউরিন টেস্টও। কিন্তু, কোনও টেস্টেই কিছু ধরা পড়ছিল না। এদিকে বছর পঁচিশের প্রতিমার পেটের যন্ত্রণা ক্রমশ বাড়ছিল। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় থ্রি ডি স্ক্যান করার। গত শুক্রবার প্রতিমার পেটের থ্রি ডি স্ক্যান করতেই চক্ষু চড়কগাছ ডাক্তারদের। ফুটফুটে সন্তান নড়াচড়া করছে তাঁর যকৃৎ আর পাকস্থলীর মাঝে। চিকিৎসকরা জানান, এ শিশু অনেকদিন আগেই ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা। কারণ তার হাত ও পা পূর্ণ শারীরিক গঠন পেয়ে গিয়েছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ প্রবোধ সোরেন জানিয়েছেন, এই ধরনের প্রেগন্যান্সিকে বলা হয়, ‘অ্যাবডোমিন্যাল প্রেগন্যান্সি।’ এতে ভ্রূণের যেখানে থাকার কথা সেখানে না থেকে অন্যত্র বাড়তে থাকে। তাতে মা-ও বুঝতে পারেন না তিনি অন্তঃসত্ত্বা। প্রতিমাদেবীর অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা টিমের অন্যতম চিকিৎসক পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌমিক বলেন, “প্রতিমার পেটে প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অস্ত্রোপচার করে ভ্রূণটিকে বার না করলে তাঁর প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। এমন ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এরকম প্রেগন্যান্সিতে ১০ হাজারে একটি সন্তান বাঁচে। এক্ষেত্রে মাকে বাঁচাতে গেলে অস্ত্রোপচার করে গর্ভস্থকে বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।”
তবে শিশুটিকে বের করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। পাকস্থলী, খাদ্যনালী ও যকৃৎ-এর ফাঁকে শিশুটির হাত আটকে থাকায় তা সন্তর্পণে ছাড়াতে হয়। ডাঃ প্রবোধ সোরেন, ডাঃ পূজা বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌমিক, ডাঃ চৈতালি সেনগুপ্ত, ডাঃ জোৎস্না ঝা ও ডাঃ দেবাশিস ঘোষের যৌথ টিম পুরো অপারেশনটি পরিচালনা করেন। ডাঃ সোরেন জানান, বাচ্চাটি উচ্চতাতেও সামান্য বেড়েছিল। এমনভাবে মায়ের পেটে ছিল যে তাকে বের করতে অনেকটাই কাটতে হয় পেট। লম্বা অস্ত্রোপচারে অনেকটাই রক্তক্ষরণ হয়। প্রতিমার হিমোগ্লোবিন নেমে যায় সাতে। অস্ত্রোপচারের পর শুক্র ও শনিবার পরপর দুই ইউনিট ব্লাড দেওয়া হয় প্রতিমাকে। শিশুটিকে যদিও বাঁচানো যায়নি। কিন্তু, আপাতত সুস্থ আছেন মা। গর্ভস্থ সন্তান খাদ্যনালী, যকৃৎ ও পাকস্থলীর দেওয়াল থেকে তার খাবার সংগ্রহ করছিল। আর একটু বড় হলেই সে যেভাবে খাবার সংগ্রহ করত তাতে শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হত। তাতে মায়ের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ছিল। বিশিষ্ট চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এটি বিরলতম ঘটনা। সাধারণ টেস্টে শিশুটির উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব ছিল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.