ছবি : প্রতীকী
অর্ণব আইচ: থানায় জেরা চলাকালীন এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সিঁথি। প্রতিবাদে থানায় ঢুকে তাণ্ডব চালরানোর অভিযোগ মৃতের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতের দিকে এই ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষে জড়াল স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
চুরির ঘটনার তদন্ত করতে চিৎপুরের এক ব্যবসায়ীকে ডেকে পাঠিয়েছিল উত্তর কলকাতার সিঁথি থানার পুলিশ। থানার ভিতরে জেরা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রৌঢ় ব্যবসায়ী রাজকুমার সাউ। অচেতন অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনাটি ঘিরে সিঁথি এলাকায় সৃষ্টি হয় ব্যাপক উত্তেজনা। অভিযোগ, প্রৌঢ়ের পরিবারের লোক ও প্রতিবেশীরা থানায় তাণ্ডব চালান। ফুলের টব ও অন্যান্য সামগ্রী উল্টে ফেলা হয়। সিঁথি থানার এক পুলিশ অফিসার এস এন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে সাউ পরিবার। এক পুলিশকর্তার কাছে তাঁরা ওই সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগে দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এর আগেও অন্য একটি ঘটনায় সিঁথি থানায় জেরা চলাকালীন মৃত্যু হয়েছিল এক প্রৌঢ়ের। পরপর একই থানায় একই ধরনের ঘটনার পর পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এদিকে, রাতে সিঁথি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। সেইসময় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গাড়ি ভাঙচুর, মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে তা অস্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
পুলিশ জানিয়েছে, পাইকপাড়া এলাকায় একটি আবাসন থেকে কল ও কলের পাইপ চুরির অভিযোগ ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত। সম্প্রতি কল চুরি যায় ওই আবাসনে। এই অভিযোগেই সোমবার সকালে সিঁথি থানায় ডেকে নিয়ে এসে জেরা শুরু হয় আনসুরা বিবি নামে এক মহিলাকে। মহিলার পরিবারের অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা ওই মহিলাকে তুলে নিয়ে এসে টানা জেরা করা হয়। পুলিশের দাবি, ওই মহিলা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে, তিনি গোটা পাঁচেক পেতলের কল চুরি করেছেন। সেইমতো একটি লিখিত বয়ানও দিয়েছেন পাইকপাড়ার বাসিন্দা ওই মহিলা। মহিলা পুলিশ অফিসারদের জানান যে, তিনি ওই কলগুলি বিক্রি করেছেন রাজকুমার সাউ নামে চিৎপুরের এক ব্যবসায়ীকে, যিনি পুরনো জিনিসপত্র কেনেন।
সেইমতো দুপুর ১২টা নাগাদ চিৎপুরের আর এম রোডে ব্যবসায়ীর বাড়িতে যান পুলিশ অফিসাররা। মধ্যাহ্নভোজনের আগেই রাজকুমারকে সিঁথি থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে। শুরু হয় জেরা। প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীর ছেলে বিজয় সাউ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ওই মহিলাকে চিনতেন না। পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর বাবাকে বলা হয়, তিনিই চোরাই জিনিসগুলি কিনেছেন। তাই তাঁকেই সেসব ফেরত দিতে হবে। ‘কলকাতা পুলিশ’ লেখা একটি কাগজের সাদা পিঠে এস এন দাস নামে ওই পুলিশ অফিসার একটি তালিকা তৈরি করেন। তার মধ্যে ছিল মার্বেল, কল থেকে শুরু করে নির্মাণের বিভিন্ন সামগ্রী। ব্যবসায়ীর ছেলের হাতে ওই তালিকা তুলে দিয়ে বলা হয়, ‘বাবাকে বাঁচাতে গেলে’ এতগুলি জিনিস তাঁকে কিনে দিতে হবে। রাজকুমার সাউয়ের ছোট ছেলে বিজয় জানিয়েছেন, তাঁর দাদা বাজারে গিয়ে দরদাম করতে গিয়ে দেখেন, ওই জিনিসগুলির দাম প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অত টাকা তাঁদের কাছে তখনই ছিল না। এর মধ্যেই টানা জেরা চলতে থাকে প্রৌঢ় ব্যবসায়ীকে। তাঁর ছেলেদের অভিযোগ, জেরা চলার সময় তাঁর বাবাকে মারধর করা হয়। ইলেকট্রিক শকও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, ওই ব্যবসায়ীর উপর অত্যাচার করা হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয়নি তাঁকে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। থানার মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী। তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.