সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ টালবাহানার পর মুখ পুড়ল বামেদের। রাজ্যসভার নির্বাচনে বিকাশ ভট্টাচার্যর মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেল সোমবার। তাঁকে প্রার্থী করেছিল বামেরা। কিন্তু তাঁর নথিতে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর তাই শেষ পর্যন্ত বাতিল হল তাঁর মনোনয়নপত্র। ঠিক সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল হল।
বামনেতা সুজন চক্রবর্তী কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, বিকাশ ভট্টাচার্যের মনোনয়নে কিছু ‘অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি’ রয়েছে। যদিও তাঁর অভিযোগ, বিকাশ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করায় তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পেয়েছে। আইন মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী। আপাতত, এই রাজ্য থেকে রাজ্যসভার ছয় আসনে তৃণমূলের পাঁচ জন আর কংগ্রেসের এক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত। ষষ্ঠ আসনের প্রার্থী পদ নিয়ে লড়াই চলছিল কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট প্রার্থীর মধ্যে৷ বামেদের বিরুদ্ধে ছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য৷
সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী হলে সমর্থনে তৈরি বলে জানিয়েছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। কিন্তু সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভোটাভুটিতে কারাত শিবিরের কাছে হারতে হয় ইয়েচুরিদের। শেষ হয়ে যায় ফের রাজ্যসভায় সীতারামের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা। তারপরেই রাজ্যসভার ষষ্ঠ আসনের জন্য প্রদীপ ভট্টাচার্যকে প্রার্থী ঘোষণা করে কংগ্রেস। আলাদা প্রার্থী দিতে হয় বামেদেরও। গত শুক্রবার রাজ্য বামফ্রন্ট ঘোষণা করে, তাঁদের প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্য। যদিও শেষমেশ বাতিলই হয়ে গেল সে মনোনয়ন।
গত শনিবার রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনি হয়। সেখানে তৃণমূলের পাঁচজন ও কংগ্রেসের একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলেই গৃহীত হয়। সমস্যা দেখা দেয় শুধুমাত্র সিপিএম প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্যর মনোনয়নপত্রকে কেন্দ্র করেই। শুক্রবার বিকেল তিনটে পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু বিকাশবাবু মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বিকেল তিনটে পার করে দেন বলে অভিযোগ। যার ফলে ওই মনোনয়নপত্রটি নিয়েই জটিলতা তৈরি হয়। শনিবার স্ক্রুটিনিতে বিকাশবাবুর মনোনয়নপত্রের জটিলতা নিয়ে সমস্যা মেটানো যায়নি।
সূত্রের খবর, রিটার্নিং অফিসারের কাছে সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের অভিযোগ জানান তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। অভিযোগ, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে একটি অতিরিক্ত এফিডেভিট কপি (সরকারি সম্পত্তি ব্যবহার করছেন কিনা) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে পারেননি বাম প্রার্থী। তিনটে বেজে পাঁচ মিনিটে বিকাশবাবু কাগজপত্র জমা দেওয়ায় তা গৃহীত হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। যদিও বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “প্রার্থী পৌনে তিনটের সময় রিটার্নিং অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারপর কাগজপত্র দেখতে যদি রিটার্নিং অফিসার সময় নেন, তার জন্য কখনই প্রার্থী দায়ী থাকতে পারেন না।” রিটার্নিং অফিসার ‘ভুল কাজ করেছেন’ বলে তোপ দেগেছেন বাম প্রার্থী।
আজ সকাল ন’টায় বাম প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের ফের স্ক্রুটিনি করে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, বিকাশবাবুর মনোনয়নপত্র বৈধ নয়। গোটা ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন সুজন চক্রবর্তী ও বিকাশ ভট্টাচার্য। দু’জনই জানিয়েছেন, “এই নির্বাচনে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। জটিলতা, চক্রান্ত তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। তারাই আবার অভিযোগ আনছে।” বিকাশবাবু হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, “মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে হবে। না হলে আইনি লড়াই চলবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.