ফাইল ছবি।
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: বিজেপির সংগঠনের হাল ফেরাতে দলের শীর্ষ নেতা রাজনাথ সিংকে বাংলায় বিশেষ কোনও দায়িত্ব দিতে পারে দিল্লি! এমনই একটি খবর ঘুরছে বঙ্গের গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে বর্ধিত আকারে রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে বসতে চলেছে বিজেপি।
আগামী ১৭ জুলাই সায়েন্স সিটিতে এই নির্বাচনী পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা সুনীল বনশল, মঙ্গল পাণ্ডে-সহ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদেরও। আর সেই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের(Rajnath Singh) থাকার কথা রয়েছে। এর আগেও রাহুল সিনহা রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন বঙ্গ বিজেপির বৈঠকে একাধিকবার এসেছেন রাজনাথ। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বাংলায় ‘২০০ পার’-এর ঘোষণা করেছিলেন অমিত শাহ। দল তিন অঙ্কে পৌছনোর আগেই থমকে গিয়েছিল। এবার লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে বাংলায় ‘অবাক করে দেওয়ার মতো’ ফলাফল হওয়ার কথা বড় মুখ করে বলেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে দলের আসন সংখ্যা ১৮ থেকে একধাক্কায় কমে ১২ হয়েছে। তার পর থেকেই বাংলায় নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন বিজেপির সর্বোচ্চ নেতারা। লোকসভা ভোটে হতাশাজনক ফলের জেরে জেলাস্তরে বড়সড় সাংগঠনিক রদবদলের পথে হাঁটতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি। তার আগে আগস্টে রাজ্য সভাপতি পদে নতুন কাউকে বসানো হতে পারে। সেখানেও ভাসছে একাধিক নাম।
এখনও পর্যন্ত ভোট বিপর্যয়ের পিছনে যা কারণগুলি উঠে এসেছে তা হল, অনেক পুরনো কার্যকর্তাকে ভোটের কাজে যুক্ত করা হয়নি। বুথ সংগঠন একেবারেই ফোঁপরা। বুথ নিয়ে ভুল রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। প্রায় সর্বত্রই বলা হয়েছিল ভালো ফল হবে। সংগঠন মজবুত। কিন্তু বাস্তবে সেটা ছিল না। এছাড়া, বাড়ি-বাড়ি প্রচারেই খামতি ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভোটারদের কাছে সেভাবে কেউ যায়নি। জেলা সভাপতিদের সঙ্গে দলের প্রার্থীদেরই সমন্বয়ের অভাব ছিল অধিকাংশ লোকসভা কেন্দ্রেই। অধিকাংশ প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে ক্ষোভ ছিল।
রাজ্য বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, “১৭ জুলাইয়ের বৈঠকে আগামিদিনে বাংলায় দল কীভাবে এগোবে, রণকৌশল কি হবে, সেইসব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। সমস্ত রাজ্যেই রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠক হবে।” তবে বাংলার বৈঠকে রাজনাথ সিংকে কেন পাঠানোর পিছনে কি উদ্দেশ্য রয়েছে তা অবশ্য বলতে পারেননি ওই সাধারণ সম্পাদক। সূত্রের খবর, বাংলায় ভোটে আশানরূপ ফল কেন হল না, তা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের কথা যেমন শোনা হবে, পাশাাপাশি আগামীদিনে দল কোন পথে চলবে এ রাজ্যে সেটাও ঠিক করে দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু সেই বৈঠকে রাজনাথ সিংয়ের থাকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, পুরনো নেতা হিসেবে বাংলায় দলের সংগঠনের হালহকিকত নিয়ে ওয়াকিবহাল কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। তাছাড়া, পুরনো নেতৃত্বের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে রাজনাথ সিংয়ের। কাজেই বঙ্গ বিজেপিতে চলা নতুন—পুরনো দ্বন্দ্ব মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন তিনি। পাশাপাশি বঙ্গ বিজেপিতে আদি—নব্য দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পুরনো নেতৃত্বকে আবার সক্রিয় করতে রাজনাথ সিংকে ব্যবহার করতে চাইছেন মোদি—শাহরা। এমনটাও খবর গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। এখন দেখার, রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে দলের রাজ্য নেতাদের কী পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.