সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির প্রবল সমালোচনা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় সচিব ও রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য, “রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের শাখা হয়ে উঠেছে রাজভবন।” সংবাদ সংস্থা এএনআই এই খবর জানিয়েছে।
তিনি বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় অনভিপ্রেত ভাষা ব্যবহার করেছেন রাজ্যপাল। রাজভবন ক্রমশ আরএসএসের শাখা হয়ে উঠেছে, যা খুবই দুঃখজনক। এমনকী, রাজভবনের প্রতিটি চাদর ও তোয়ালেতেও বিজেপির লোগো দেখতে যাওয়া যাচ্ছে।” রাজ্যপাল আর রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের মতো কথা না বলে বিজেপির ভাষায় কথা বলছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন এই তৃণমূল সাংসদ। ডেরেক বলেছেন, “সংবিধানকে রক্ষা না করে আরএসএসের প্রতিনিধির মতো আচরণ করছেন রাজ্যপাল।” একজন প্রবীণ নাগরিক হলেও রাজ্যপালের এই আচরণ সমর্থনযোগ্য নয় বলে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন।
মঙ্গলবার ডেরেক বলেন, “গণতান্ত্রিক কাঠামো মেনে মমতা একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। উনি কংগ্রেস, বিজেপি বা সিপিএমের নয়, রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তবে রাজ্যপালের এই আচরণে আমি খুব একটা আশ্চর্য হইনি, এমনটা আগেও হয়েছে আর এবারই শেষ নয়। রাজ্যপালের পদকে আমরা সম্মান করি, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে উনি সেটা করতে দিচ্ছেন না।” এরপরই ডেরেক যোগ করেন, “সংবিধান মোতাবেক রাজ্যপালের বিরোধিতা করতে পারেন রাষ্ট্রপতি ও তাঁকে সরিয়েও দিতে পারেন।” তৃণমূল কংগ্রেস রাষ্ট্রপতির কাছে সেই আবেদনই করবে, এমনটাই ইঙ্গিত তৃণমূল সাংসদের।
মঙ্গলবার বাদুড়িয়ায় হিংসাত্মক ঘটনা প্রসঙ্গে টেলিফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর। তারপরই ক্ষুব্ধ, অপমানিত মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ক্ষোভ উগরে দেন রাজভবনের বিরুদ্ধে। তাঁর মারাত্মক অভিযোগ, “আমায় থ্রেট করা হয়েছে। জীবনে এত অসম্মানিত হইনি। এতটাই যে একসময় মনে হয়েছিল, ছেড়ে চলে যাই। বিজেপি ব্লক সভাপতির মতো আচরণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। আমি মানুষের রায়ে নির্বাচিত, রাজ্যপালের দয়ায় নই। উনি কেন্দ্রের মনোনীত। বিজেপির ব্লক সভাপতির ভাষায় কথা বলছেন।”
Article 156 of Constitution states,President can remove Guv, after this incident,worth considering asking Guv to leave: Derek O Brien,TMC pic.twitter.com/PM1Ou9OYfd
— ANI (@ANI_news) July 4, 2017
এমন মেজাজে মুখ্যমন্ত্রীকে খুবই কম দেখা যায়। পরে রাজভবন থেকে কড়া ভাষায় বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা দেখে হতবাক রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে কথোপকথন গোপনীয় বিষয়। সেটা প্রকাশ্যে আসাতেও বিস্মিত রাজভবন। বিবৃতির মর্মার্থ, মুখ্যমন্ত্রীকে হুমকি দেওয়া হয়নি। তিনি আহত হন, এমন কিছুও বলা হয়নি। রাতে জল গড়ায় দিল্লি পর্যন্ত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং ইস্যু ছাড়াও এ বিষয়ে ক্ষোভের কথা জানান। রাজনাথ কথা বলেন রাজ্যপালের সঙ্গেও।
ঘটনাক্রম হল, সোমবার সকাল থেকে মূলত উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া এলাকায় ধর্মকে আঘাতকারী একটি ফেসবুক পোস্টের পর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়। সকালেই সেই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নজর রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ও দু’পক্ষের উসকানির প্রেক্ষিতে উত্তেজনা বেড়েছে, পথ অবরোধও হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল আরএসএস ও বিজেপির প্রতিনিধিদল। দলের সদ্স্যরা বাদুড়িয়ার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আরজি জানান। সূত্রে খবর, ওই প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সামনেই রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন। প্রায় আট মিনিট দু’জনের মধ্যে ফোনে কথা হয়।
I made it clear to him (Governor) that he cannot speak to me in such a manner, cannot threaten me: Mamata Banerjee,West Bengal CM pic.twitter.com/MYwGRrStvX
— ANI (@ANI_news) July 4, 2017
অসমর্থিত সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরাসরি রাজ্যপাল জানতে চান, আইনশৃঙ্খলা আপনার হাতে রয়েছে। আপনি সামাল দিতে পারছেন কোথায়? রাজ্যপাল প্রশ্ন করেন, এসব কী হচ্ছে? মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিজেপি করছে। রাজ্যপাল রেগে বলেন, বিএসএফ স্ট্যান্ড বাই রয়েছে। তাড়াতাড়ি অ্যাকশন নিন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনি বিজেপির হয়ে কথা বলছেন। রাজভবন থেকে পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এমন কথা বলা হয়নি, যাতে মুখ্যমন্ত্রী আহত হতে পারেন বা হুমকি বলে ভাবেন। রাজ্যপাল আইন—শৃঙ্খলা ও শান্তিরক্ষার কথা বলেন। রাজ্যের অভিভাবক হিসাবে কোনও গুরুতর অভিযোগ পেলে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা তাঁর দায়িত্ব। তিনি কোনও দল বা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নন। রাজ্যের ঘটনা নিয়ে তিনি মূক দর্শক হয়ে থাকতে পারেন না।”
Surprised at attitude & language used by CM, talks were confidential in nature and none is expected to disclose it: WB Governor KN Tripathi pic.twitter.com/2dilxMxskm
— ANI (@ANI_news) July 4, 2017
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.