সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর পর এবার কালীপুজোতেও বৃষ্টির ভ্রুকুটি। বুধবার সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকার পর বিকেল নামতেই শহরের একাধিক এলাকায় শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। আগামিকালও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে কালীপুজোর আনন্দ মাটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরেই এদিনের বৃষ্টিপাত। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় নিম্নচাপটি আরও গভীর হবে বলে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের। তার জেরে দক্ষিণবঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস। ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হাওয়া অফিসের অনুমান, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ওড়িশা উপকূলের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। যার জেরে আগামিকাল রাজ্যের ছয় জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হতে পারে ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতাতেও। সবমিলিয়ে আলোর উৎসবের প্রাক্কালে বঙ্গবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ। চিন্তায় পড়েছেন বাজি ব্যবসায়ীরাও। ধর্মতলায় বাজি বাজারে এদিন বৃষ্টি নামতেই মাথার উপর আড়াল খুঁজতে ছোটাছুটি করেছেন ক্রেতারা। আগামিকালও এরকম বৃষ্টি হলে কী হবে, ভেবে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
এমনিতেই আলোর উৎসবের রেশ বাঙালির গায়ে লেগে গিয়েছে। রোশনাই অটুট রেখে নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করার আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন। শব্দবাজি থেকে নাশকতা – অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে দুর্ঘটনা, সবকিছু রুখতেই প্রস্তুত কলকাতা ও জেলা প্রশাসনগুলি। মঙ্গলবারই ড্রেস রিহার্সাল শেষ করেছে প্রশাসন। পুলিশ, দমকল, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকে নবান্ন। ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোলরুম খুলে রাখা হয়েছে। বাঙালি, অবাঙালিদের আলোর উৎসব সুষ্ঠুভাবে করতে তৎপর সবাই। প্রশাসন চাইছে আলোর উৎসবে প্রাধান্য পাক আতশবাজি। এদিকে কলকাতায় শুরু হয়ে গিয়েছে কালীপুজোর উদ্বোধন। মঙ্গলবার একগুচ্ছ পুজোর উদ্বোধনে হাজির ছিলেন প্রশাসনের মূল কান্ডারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তা, কাল কালীপুজোয় কলকাতার পাশাপাশি দুই ২৪ পরগণা ও মেদিনীপুরেও বৃষ্টি হতে পারে।
এবার শহরে মোট বারোয়ারি কালীপুজোর সংখ্যা ৩৫৮৪টি। শব্দবাজির দাপট রুখতে এ বছরও থাকছে কড়া নজরদারি। বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে এ বার অটো করে শহরের অলিগলিতে নজরদারি চালাবে কলকাতা পুলিশ। পুজোর শহরে নজরদারি চালাতে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে একশোটি অটো নামানো হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায়, বিশেষ করে অলিগলিতে চক্কর দেবে অটোগুলি। এর পাশাপাশি, শনিবার কালীপুজোর দিনে গোটা শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবে প্রায় তিন হাজার পুলিশ। দায়িত্বে থাকবে মহিলা পুলিশও। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকছে ৬১৪টি পুলিশ পিকেট। থাকছে ২৩টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড। থাকছে ২৫টি মোবাইল পেট্রোলিং। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকছে ২১টি কুইক রেসপন্স টিম। থাকছে ২৭টি ওয়াচ টাওয়ার। বাজির আগুনে কেউ অগ্নিদগ্ধ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য থাকছে ২৪টি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। নাশকতা রুখতে তৈরি রাখা হচ্ছে স্পেশাল অ্যাকশন স্কোয়াডকেও। এই হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড ও কুইক রেসপন্স টিম দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর পাশাপাশি, মেট্রো রেলের ২৩টি স্টেশনে থাকছে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা। অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে শহরে থাকছে পুলিশের ১৬টি বাড়তি সিসিটিভি। এছাড়াও দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্যপুলিশ ও কলকাতা পুরসভা, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মধ্যে সমন্বয়কারীর অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁর কাজই হল যে কোনও পরিস্থিতিতে প্রত্যেক দপ্তরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা। শহরের জনপ্রিয় কালীপুজোগুলিতে পুলিশের তরফে বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। শব্দবাজি হোক বা ডিজে মিউজিক। অভিযোগ এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে। এছাড়া বহুতলগুলির মধ্যেও যাতে কেউ শব্দবাজির ব্যবহার না করতে পারে তার জন্য নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। বহুতলগুলিকেও নজরদারির কাজে লাগানো হবে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, বহুতলের ছাদে রাখা হবে সাদা পোশাকের পুলিশ। ওই কর্মীদের দায়িত্ব একদিকে উপর থেকে গোটা এলাকার উপর নজরদারি চালানো। কলকাতার মতোই সল্টলেক, লেকটাউন, নিউ টাউন-সহ বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায়ও জোরদার করা হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাজির দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এ সব এলাকার আবাসন ও বহুতলের বাসিন্দা এবং বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের অন্য সব ছোট শহরগুলিতেও পুলিশকে বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে। দুর্গাপুর, শিলিগুড়ির মতো শহরগুলির উপর বিশেষ নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও কালীপুজোর জন্য বিখ্যাত বারাসত। সেখানেও উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশকে যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর জন্য সামীন্তরক্ষী বাহিনীর কাছে আবেদন করেছে রাজ্য প্রশাসন। কেউ যাতে উসকানিমূলক প্রচার বা গোলমাল না পাকাতে পারে উৎসবের মরশুমে তার উপরও নজর রাখার কথা বলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.