রিংকি দাস ভট্টাচার্য: গত সপ্তাহে ৩ দিন যেন আকাশ ভেঙে পড়েছিল। অবিরাম বৃষ্টি ভাসিয়ে দিয়েছিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গকে। ভয় হয়েছিল বন্যা না হয়ে যায়। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে জায়গায় জায়গায় জল জমার সাময়িক দুর্ভোগ, ঘেমো প্যাচপ্যাচে গরম থেকে ক্ষণিকের রেহাই এবং চাষের মুখে স্বস্তির হাসি ছাড়া লাভের ভাঁড়ারে আর বিশেষ তেমন কিছুই নেই। আবহাওয়া দপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বর্ষণের ঘাটতিতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এখনও দেশের শীর্ষে। শ্রাবণের শেষেও তা দাঁড়িয়ে আছে ২৯ শতাংশে (১ জুন-২২ আগস্ট)। যেখানে রুক্ষ পশ্চিম রাজস্থান বা মহারাষ্ট্রের বিদর্ভেও বর্ষা পা চালিয়েছে স্বাভাবিক ছন্দে। ব্যতিক্রম শুধু এই চির শস্য-শ্যামলা গাঙ্গেয় বঙ্গ।
পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া ঝাড়খণ্ডেও এবার বৃষ্টিতে বিলক্ষণ টান। সেখানে ঘাটতির বহর ২৮ শতাংশ। চাষিদের পাশাপাশি মাথায় হাত আমজনতারও। বৃষ্টির পালা কি এখানেই শেষ? আশাহত করছে না আলিপুর। তাঁদের কথায়, বর্ষার নির্ঘণ্ট অনুসারে হাতে আরও মাস দুয়েক সময় রয়েছে (দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায়ের সময় ৮ অক্টোবর)। তবে তার মধ্যে ঘাটতি পূরণ করতে হলে অতিবৃষ্টি প্রয়োজন। “কিন্তু অল্প সময়ে অতিবৃষ্টি হলে লাভ তো হবেই না। উলটে চাষ-আবাদে এবং জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।”- বলছেন এক আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ। হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বৃহস্পতিবার বলেন, “সাগরে নতুন করে একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হয়েছে। যার জেরে এদিন সন্ধ্যায় মহানগর এবং দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তুমুল বর্ষণ হয়।”
তাহলে কি ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা? আশা জাগাচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। গণেশবাবুর কথায়, ঘূর্ণাবর্তটি ওড়িশা লাগোয়া হওয়ায় বেশি বৃষ্টি পাওয়ার সম্ভাবনা পড়শি রাজ্যের। এবছর এমন পরিস্থিতি কেন? আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গে যে বর্ষা এই প্রথম এমন কৃপণ, তা নয়। অতীতেও হয়েছে এমনটা। কিন্তু এ বছর শুরু থেকেই বঙ্গোপসাগরে বর্ষা দুর্বল। বর্ষার হালে পানি জোগাতে পারে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ। তবে এ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে যে ক’টি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, তার একটিও গাঙ্গেয় বঙ্গের দিকে আসেনি। ওড়িশার দিকে যাওয়ার ফলে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের যেটুকু প্রভাব পড়েছে, তাতেই অল্পবিস্তর বৃষ্টি পাওয়া গিয়েছে এই এলাকায়। গাঙ্গেয় বঙ্গের মতো একই কারণে ঝাড়খণ্ডও বৃষ্টির অভাবে ভুগছে।
অনেকে বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে জলবায়ু বদলে যাচ্ছে। বঙ্গে বর্ষার চরিত্রবদল কি সেই কারণেই? জলবায়ু বদলের তত্ত্ব মেনে নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দপ্তরের অনেক পদস্থ বিজ্ঞানীও। কিন্তু বর্ষার এই খামখেয়ালিপনা তারই নিদর্শন কি না, সেটা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তাঁরা। আবহবিদদের বক্তব্য, আগের বছর বর্ষার চরিত্র এমন ছিল না। তাই শুধু এক বছরের নিরিখে এটা বলে দেওয়া যায় না যে, বর্ষার চরিত্র বদলে গিয়েছে। অনেক আবহবিজ্ঞানী বলছেন, এ বছর জুন পর্যন্ত ‘এল নিনো’ (প্রশান্ত মহাসাগরে জলতলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি) পরিস্থিতি ছিল। তার প্রভাবে বঙ্গোপাসাগরে বর্ষা দুর্বল হয়েছে। এর আগে অবশ্য এল নিনো পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গাঙ্গেয়বঙ্গে স্বাভাবিক বর্ষার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু এবার এল নিনো-র সঙ্গে আরব সাগরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে দুর্বল হয়ে গিয়েছে এই এল নিনো। এই পরিস্থিতিতে স্লগ ওভারে কি ঘুরে দাঁড়াবে বঙ্গের বর্ষা? সেই উত্তর খুঁজছেন আবহবিদরাও। কেউ কেউ বলছেন, শেষ লগ্নে বর্ষা বেশ ভালভাবেই গা-ঝাড়া দিতে পারে। তা হলে পুজোর বঙ্গে ফের বৃষ্টির খাঁড়া!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.