স্টাফ রিপোর্টার: রেল দুর্ঘটনা (Train Accident) এড়াতে ঘটা করে কবচ প্রকল্প চালু করেছিল মোদি সরকার। কিন্তু সেই প্রকল্প আদৌ কবে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে, তার কোনও দিশা দিতে পারলেন না রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Baishnab)। জানালেন, এটা একদিনে সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। সময়সাপেক্ষ। তবে আগের তুলনায় এই প্রকল্প অনেক গতি পেয়েছে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় কোনওভাবেই অবশ্য কবচ প্রকল্পকে দায়ী করতে চান না রেলমন্ত্রী। তাঁর কথায়, অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেম (ATPS) বা কবচ, কোনওকিছুকেই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা ঠিক নয়। কারণ, দুর্ঘটনা হয়েছিল পয়েন্টে গোলযোগের কারণে। পয়েন্ট সোজা সেট না করে লুপ লাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে পরিষ্কার করে তিনি করমণ্ডল দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে মুখ খোলেননি। বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার শিকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা চাই সতি্যটা দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসুক। আমাদের উদ্দেশ্য, বাহানাগা বাজার স্টেশনে দর্ঘটনার দিন ঠিক কী হয়েছিল, তা খুঁজে বের করা। টেকনিক্যাল সমস্যা নাকি অন্য কিছু। এই ঘটনা যাতে আর কখনও না ঘটে সেইটা দেখাই আমাদের লক্ষ্য।’’ পাশাপাশি বাহানাগা স্টেশন নিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পর থেকেই তদন্তের জন্য সিগন্যালিং ব্যবস্থা সিবিআইয়ের অধীনে ছিল। দিনদুয়েক আগে তা রেলকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে কিছু কাজ চলছে। তা শেষ হয়ে গেলেই দিনকয়েকের মধ্যেই ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’
বুধবার বিকেলে কলকাতায় এসে রেলমন্ত্রী হাওড়া ময়দান থেকে মেট্রোয় চড়ে গঙ্গার তলা দিয়ে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত আসেন। পরে রেল এবং মেট্রোর আধিকারিকদের সঙ্গে একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন। মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত গঙ্গার তলা দিয়ে যাত্রী পরিষেবা শুরু করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। পূর্ব রেল তাদের আয়ের কথা উল্লেখ করেছে। জানিয়েছে, গত অর্থবর্ষে তারা ১০,৬৮৪ কোটি টাকা আয় করেছে। তাদের ৬০টি স্টেশনের উন্নয়ন করা হবে। ৩৮০ স্টেশনে বসবে সিসিটিভি।
এদিন করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি যেন না করা হয়। সিবিআই এবং কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি বা সিআরএস বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।’’ রেলকে নিয়ে বিরোধীদের রাজনীতি করতে বারণ করলেও এদিন রেলমন্ত্রী অবশ্য নিজে বারবার রাজনীতির বুলি আউড়ালেন। বিজেপি সরকারের আমলে কী হয়েছে, তা তুলে ধরলেন। বলেন, ‘‘২০১৪ সালে মোদি সরকার রেলে প্রথম অটোমেটিক ট্রেন প্রোটেকশন সিস্টেমের কাজ শুরু করে। এটা একদিনে সম্ভব নয়। অন্যান্য অনেক দেশে নয়ের দশকে এই প্রযুক্তি এসেছিল। কিন্তু এখানে আসেনি। ২০১৬ সালে ‘কবচ’ ডেভলপ করেছে। শুরুতে যখন ডিজাইন হয়েছিল, এক বছরে ৪০ কিলোমিটার ট্র্যাকে তা ইনস্টল করা গিয়েছে। এখন বছরে দু’ হাজার কিলোমিটার লাইনে কবচ হয়। কয়েক বছরের মধে্য ছ’হাজার কিলোমিটার ট্র্যাকে কবচ প্রযুক্তির টার্গেট নেওয়া হয়েছে।’’
বিরোধীদের দাবি, এসবই কথার কথা। ভারতে প্রায় ৬৮ হাজার কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র দু’হাজার কিলোমিটার ট্র্যাক কবচের আওতায় এসেছে। মাত্র ৬৫টি ইঞ্জিনে বসানো হয়েছে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস। ২০০১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই কবচ প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিতি ঘটে। তখন শুধুমাত্র লোকোতেই অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বসানোর কথা বলা হয়। ২০২০-র পর নতুন নামকরণ করা হয় ‘কবচ’। এমন এক প্রযুক্তি, যা দুটো ট্রেনের সংঘর্ষ আটকাতে সক্ষম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.