ছবি: প্রতীকী
সুব্রত বিশ্বাস ও সোমনাথ রায়: প্রায় সাড়ে সাত মাস পর রাজ্যবাসীর সুবিধায় সকাল-সন্ধে বিশেষ কয়েকজোড়া ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে নবান্ন। এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার পূর্ব রেলের (Eastern Railway) কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। দৈনিক যাত্রী সংখ্যার হিসেবনিকেশ কষে রেল কর্তাদের মত, ট্রেনে সামাজিক দূরত্ব (Social Distance) বজায় রাখতে হলে বেশি সংখ্যক ট্রেন (Trains) চালানো আবশ্যক। সোমবার নবান্নে এই সংক্রান্ত বৈঠকে এসবই তাঁরা বিস্তারিত জানাবেন বলে সূত্রের খবর। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন পূর্ব রেলের এজিএম, সিওএম, সিসিএম, হাওড়া ও শিয়ালদহের ডিআরএম। থাকবেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকরাও।
হাওড়া ও শিয়ালদহের ডিআরএম (DRM) ইশাক খান ও এসপি সিং জানিয়েছেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভিড় এড়াতে সব ব্যবস্থাই করবে রাজ্য। স্টেশনগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে রাজ্য পুলিশ। ফলে রাজ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ট্রেন চলাচল সম্পর্কে। কোথায়, কত সংখ্যক ট্রেন, কীভাবে চলবে, যাত্রীরা কার্ড না কিউআর কোড নাকি টিকিট কেটে ট্রেনে চড়বেন, সেসব বিষয়টি নির্ভর করছে রাজ্যের নির্দেশের উপর।
পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়ন। সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষের মতে, যত বেশি ট্রেন চলবে, তত বেশি দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে। সকালে ও বিকালে কিছু ট্রেন চললে বিপত্তি থেকেই যাবে বলে তিনি মনে করছেন। হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান একেবারে হিসেব দিয়ে জানাচ্ছেন, একটি লোকাল ট্রেনে ১০০০ যাত্রী হয়। ব্যস্ত সময় সংখ্যাটা ৩ থেকে ৪ হাজার গিয়ে দাঁড়ায়। দৈনিক গড়ে হাওড়ায় ৪৩০টি লোকাল ট্রেন চলে। যাত্রী সংখ্যা সাড়ে নয় লক্ষ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হলে একটি ট্রেনে ৭০০ থেকে ৮০০র বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। শিয়ালদহের ডিআরএম এসপি সিংও জানিয়েছেন, তাদের মোট ৯২০টি লোকালে দৈনিক যাত্রী সংখ্যা প্রায় কুড়ি লক্ষ। কম ট্রেনে এই ভিড় আছড়ে পড়লে বিপত্তি নিশ্চিত। ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের মূল ভূমিকা থাকলেও রেল নিজস্ব বাহিনীকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে চায়। হাওড়া, শিয়ালদহের মতো বড় স্টেশনগুলি বাদে দুই ডিভিশনে যে অজস্র স্টেশন রয়েছে, তাতে যাত্রী ভিড় নিয়ন্ত্রণের আগাম পরিকাঠামো তৈরি করে রেখেছে রেল। স্টেশনের দুই প্রান্ত টিন দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে, যাতে যে কোনও জায়গা দিয়ে যাত্রীরা ঢুকে পড়তে না পারে।
নিত্য যাত্রীদের পাশাপাশি ট্রেন চলাচলের খবরে খুশি হকার ইউনিয়নগুলো। হাওড়া জেলা তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য জানান, ”ট্রেন চলার কথা ঘোষণায় আমরা খুশি। করোনা ও লকডাউনে রেল হকারদের অবস্থা খুব খারাপ। সামাজিক দূরত্ব রেখে তারা হকারি করতে পারলে খুব ভালো হবে।” খুশি যাত্রী সংগঠনগুলি। তাদের কথায়,”সাধারণ যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত করতে পারলে বড় উপকার হবে। সাড়ে সাত মাস লোকাল ট্রেন চলছে না। মানুষ বাসে দশ মিনিটের পথ যেতে এক ঘন্টা লাগছে। এর থেকে নিষ্কৃতি পাবেন।”
এদিকে, রাজ্যে লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু করতে চেয়ে এবার রেলমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস সংসদীয় দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরি। রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলকে লেখা চিঠিতে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, মেট্রো পরিষেবা কলকাতায় যেভাবে চালু হয়েছে, তাকে সামনে রেখে লোকলও চালাতে উদ্যোগ নেওয়া হোক। শুধুমাত্র রেলকর্মীদের জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা কেন? লোকাল ট্রেন চালুর সঙ্গে বহু মানুষের রুটিরুজির যোগ রয়েছে বলেও তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। সবমিলিয়ে, রাজ্যে সাধারণ যাত্রীদের জন্য ট্রেন পরিষেবা চালু হওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.