ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় : জোট সমীকরণ দানাই বাঁধতে পারল না। লোকসভা ভোটে একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা। শুক্রবার হাইকম্যান্ডের পক্ষ থেকে এরাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈয়ের সঙ্গে বৈঠক করে প্রদেশ কংগ্রেস। জানানো হয়, একাই লোকসভা ভোটে লড়াইয়ের জন্য তৈরি দল। প্রদেশের দাবি মেনে নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। অর্থাৎ লোকসভা ভোটে একা লড়াইয়ের পক্ষে সমর্থন জানাল হাইকম্যান্ড। গৌরব গগৈয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এদিন নির্বাচন পরিচালনার জন্য তৈরি হল ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট টিম। এর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও নির্বাচনী ম্যানেজমেন্ট টিম ছিল না। এর মাধ্যমেই সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচালনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কংগ্রেস।
তৃণমূল কংগ্রেসের ব্রিগেডে দেশের সব বিরোধীরা বিজেপি বিরোধী জোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সোনিয়া গান্ধীর প্রতিনিধি হিসেবে ওই সভায় এসেছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও নেতাকেই সেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। তৃণমূল কংগ্রেস খুব ভালভাবে জানে, ১:১ ফর্মুলায় চললে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও জোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এদিন সেই ধারণাকেই সিলমোহর দিল প্রদেশ কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, “আমি একলা চলার পক্ষেই। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই।” তবে বাম শিবিরের সঙ্গে জোটের প্রসঙ্গ উহ্য রাখলেন তিনি। জানালেন, “বামফ্রন্ট কেন জোট ভাঙল জানি না। বামেদের পক্ষ থেকে এখনও কোনও জোটের প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব আসলে দেখা যাবে।”
তিন রাজ্যে বিধানসভায় জয়ের পরই কংগ্রেস আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। মমতার ব্রিগেডকে নৈতিক সমর্থন করলেও কংগ্রেস অন্ধ্রপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে একাই লড়বে, তা আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বাংলায় তার অন্যতম কারণ তৃণমূল। আর অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নাইডু। দেশের অধিকাংশ রাজ্যে জোটে গেলেও অনেক রাজ্যে একা লড়তে হচ্ছে কংগ্রেসকে। আর কোথাও কোথাও স্থানীয় দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এখনও তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও সমঝোতার কথা ঘোষণা করা হয়নি। আর হবে বলেও কোনও ইঙ্গিত নেই। তাই আগেভাগে শুক্রবার লোকসভা নির্বাচনে একলা লড়াই করার ঘোষণা করল প্রদেশ কংগ্রেস।
এবার প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের আগে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কতগুলো কমিটি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিল। মিডিয়া কো-অর্ডিনেশন, শৃঙ্খলারক্ষা, নির্বাচনের এক্সিকিউটিভ কমিটির মাধ্যমে এবার নির্বাচনের প্রচার ও পরিচালনা করবে কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনে সব প্রদেশেই এই টিম তৈরি হচ্ছে। কোন প্রার্থী কত টাকা পাচ্ছেন, কোথায় কত সংখ্যক দলীয় পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার তৈরি হবে – সেসবের হিসেব রাখা হবে। কোথায় কোথায় কোন নেতার জনসভা হবে, দিল্লি থেকে নেতারা গাড়ি, হেলিকপ্টার বাবদ কত টাকা খরচ হবে, তার সব হিসেব করবে এই ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট টিম নির্বাচন কমিটি। প্রার্থী নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কমিটির সদস্যরা। তারপর এই টিমই প্রার্থী তালিকা দিল্লিতে হাইকম্যান্ডের কাছে পাঠাবে। প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর তা বাস্তবায়নের কাজ সামলাবে এই টিম। প্রাক্তন বাম মন্ত্রী আবদুস সাত্তারকে রাজ্য কমিটির সাধারণ সচিব ঘোষণা করল কংগ্রেস। তিনি কিছুদিন আগেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে গেলেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ফিরলেন অরুনাভ ঘোষ। তাঁকে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে, লোকসভায় লড়তে নিজেদের বেশ গুছিয়ে নিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.