ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: রবীন্দ্র সরোবরের জল দূষিত নয়। রিপোর্ট পেশ করে জানিয়ে দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। যদিও সরোবর ও ওই এলাকার পরিবেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে রাজ্য প্রশাসন। নবান্ন সূত্রে খবর, ১৫ সদস্যের এই কমিটির সুপারিশ মেনেই ১৯২ একর জলাভূমির উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
ছটপুজোয় রবীন্দ্র সরোবরের জলে ফুল-পাতা, ঘি ও অন্যান্য উপকরণ ফেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সরব হন পরিবেশবিদরা। যদিও পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর এবং পুরসভা যৌথভাবে ছটপুজোর পরদিন সকালেই সরোবরের জল পরিষ্কার করে। তবে এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও ছটপুজোর পরদিনই দু’দফায় সরোবরের জলের নমুনা সংগ্রহ করে। পর্ষদের পরীক্ষাগারে সেই জলের নমুনা পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হয়েছেন ছটপুজোর পর সরোবরের জল দূষিত হয়নি। যেসব উপাদান থাকলে মাছ-সহ জলজ প্রাণী বাঁচতে পারে তার সবগুলিই স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে।
পর্ষদের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে কোনও জলাশয়ের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে সেই জলের পিএইচ ভ্যালুর উপর। সরোবরের জলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে পিএইচ ভ্যালু ৬.৫ থেকে ৮.৫-এর মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ জলের অম্লত্ব ও ক্ষারের পরিমাণ স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত, নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সরোবরের জলে বিওডি (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড) লেভেল প্রতি লিটারে একবার পাওয়া গিয়েছে ১.২৫, আরেকবার ১.৯৫। তৃতীয়ত, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ যেখানে লিটার পিছু ৫ মিলিগ্রাম থাকার কথা, সেখানে ছটপুজোর পর সরোবরের জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ প্রতি লিটারে ৯.৫ থেকে ৯.৩ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ মাছ-সহ জলজ প্রাণীর প্রাণ সংশয়ের কোনও আশঙ্কা অমূলক। তবে কলিফর্ম ব্যাক্টেরিয়ার রিপোর্ট পেতে মঙ্গলবার পেরিয়ে যাবে বলে পর্ষদের এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন।
ছটপুজোর পর সরোবরের জল দূষিত হয়নি- খোদ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এমন রিপোর্ট পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, মরা মাছ বা কচ্ছপ কেন ভেসে উঠল। উত্তরে পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেছেন, “সরোবরের জল দূষিত হলে একসঙ্গে অনেক মাছ, কচ্ছপ-সহ জলজ প্রাণীর মৃত্যু হত। একটি বা দু’টি প্রাণীর মৃত্যু হত না।” এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র সরোবরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সুপারিশ মেনেই সরোবরের সামগ্রিক উন্নয়নে পদক্ষেপ নেবে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর।
তথ্য বলছে, কলকাতার মধ্যে একমাত্র রবীন্দ্র সরোবরেই ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ পাওয়া যায়। সেই জায়গাটি বিশেষভাবে রক্ষা করা হচ্ছে। ওয়েস্টবেঙ্গল বায়ো ডাইভারসিটি বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সরোবরের চারদিকে অন্তত ৭ হাজার ন’শোটি বড় গাছ রয়েছে। প্রতি বছর শীতের মরশুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ২৩টি বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি সরোবরে আসে। আবার জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে উড়ে যায়। কাক, শালিখ-সহ ৬৯টি প্রজাতির দেশীয় পাখি এই সরোবরে বেড়ে উঠছে। সরোবরে রয়েছে ৪০টি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ১৫টি বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে সরোবরের চারধারে। ১১টি বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপেরও সন্ধান মিলেছে এই সরোবর এলাকায়। বিভিন্ন প্রজাতির সাপেরও সন্ধান মিলেছে। পাঁচটি বিরল প্রজাতির ব্যাং-সহ অন্যান্য উভচরেরও সন্ধান মিলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.