ফাইল ছবি
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পুরনো নেতাদের সম্মান দেওয়াই বিজেপির সংস্কৃতি। তা মেনে পুরনোদের যোগ্য সম্মান ও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কি? বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরকে এমনই প্রশ্নের মুখে পড়তে হল। পুরনো নেতা-কর্মীরা কি মাঠে নামছে, তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে দলের কাজে লাগানোই বা হচ্ছে কি না, এমনই প্রশ্ন তুলল রাজ্যে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা।
পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে দলের আদি শিবিরকে মাঠে না নামানো গেলে পার্টির ক্ষতি। তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। তাই অবিলম্বে রাজ্য নেতৃত্ব ও জেলা সভাপতিদের বলা হয়েছে পুরনোদের তালিকা তৈরি করে তাদের বৈঠকে ডাকতে হবে। নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিতে হবে। দলের মধ্যে ক্ষোভ, কোন্দল এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, পুরনোদের গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় দেখছেন না সুনীল বনশল (Sunil Bansal) থেকে মঙ্গল পাণ্ডেরা (Mangal Pandey)। কারণ, কমিটিতে বা পদে বিক্ষুব্ধদেরও কাছে টানতে হবে।
একুশের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বঙ্গ বিজেপির (BJP) সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। তারপর একাধিক উপনির্বাচন ও পুরভোটে পর্যুদস্ত হয়েছে গেরুয়া ব্রিগেড। ভোটের গ্রাফও ক্রমশ নেমেছে। আর নেতাদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ চলছে পালা করে। রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও ফাটল প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্য বিজেপির বর্তমান ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur) থেকে শুরু করে সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। দল পরিচালনা নিয়ে দলীয় বৈঠকে সুকান্ত মজুমদার ও অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল আরেক সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে (Locket Chatterjee)। এরপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুকান্ত-দিলীপ ও শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) মধ্যে দূরত্ব সামনে এসেছে। এসবই দিল্লির নজরে রয়েছে। তার মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল, মঙ্গল পাণ্ডে। আবার বীরভূম, বাঁকুড়ার গিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার এবং দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। সর্বত্রই বুথ ও মণ্ডলস্তরে সংগঠনের বেহাল ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। গোষ্ঠী কোন্দলের ছবিটাও পরিষ্কার হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত এবং ২০২৪-এ লোকসভা ভোটের কথা ভেবে দলকে চাঙ্গা করতে বিক্ষুব্ধ শিবিরের ক্ষোভে মলম লাগিয়ে তাদের কাছে টানার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, অযোগ্য, কাজ না করা, পদ আঁকড়ে পড়ে থাকা নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরানো প্রয়োজন। তাঁদের অধিকাংশকে নিয়েই দলের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাই জেলাস্তরের বিভিন্ন কমিটিতে আমূল পরিবর্তন ও অযোগ্যদের সরিয়ে আদি-নব্য সমন্বয় চাইছেন বনশল থেকে পাণ্ডেরা। দুর্গাপুরে বঙ্গ বিজেপির (BJP) কর্মসমিতির বৈঠকে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা দলের রাজ্য ও জেলা পদাধিকারীদের বলেছেন, যারা বর্তমানে পদে আছেন আগামী দিনে নাও থাকতে পারেন। তাই পুরনোদের গুরুত্ব দিয়ে কেন ডাকা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও বৈঠকে করেছেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এই বার্তার পরই রাজ্য ও জেলা নেতারা দলের পুরনো ও নিষ্ক্রিয়দের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.