অর্ণব আইচ: শুধু মাংস-ভাত নয়। গ্রিনি, জুয়েল, সিজারদের মেনুতে থাকতেই হবে কুমড়ো। সঙ্গে অল্প হলেও পেঁপে। এ ছাড়াও রয়েছে টক দই আর ডিম।
কলকাতা পুলিশের সারমেয় বাহিনীর মুখে উৎকৃষ্ট খাবার দিতে এবার দরপত্র হেঁকেছে লালবাজার। প্রত্যে ক মাসে ডগ স্কোয়াডের প্রত্যেকটি কুকুরের পিছনে রাজ্য সরকারের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭৫০ টাকা। যদিও অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণে সেই বরাদ্দ বাড়ানোও হয়।
লালবাজার জানিয়েছে, মাংস-ভাত-ডালিয়ার মতো পুলিশ কুকুরদের সবজি খাওয়ানোর উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রত্যেক মাসে গড়ে মোট তিন কিলো সবজি লাগে একেকটি সারমেয়র জন্য। এর মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কুমড়োকে। দিনে এক বেলা পুলিশ কুকুরদের পাতে থাকতেই হবে মিষ্টি কুমড়ো। কারণ, কুমড়োয় থাকে ফাইবার। তার উপর এই সবজিতে রয়েছে ভিটামিন এ, যা এই পোষ্যদের অত্যন্ত কাজে লাগে। পুলিশ কুকুরদের শুধু ঘ্রাণের উপর নির্ভর করে থাকলে চলে না, তাদের দৃষ্টিও তীক্ষ্ণ হতে হয়। তাই কুমড়োর মাধ্যমেই তারা ভিটামিন এ পায়। কুমড়ো পেট পরিষ্কার রাখতেও কাজে লাগে। কুমড়ো ছাড়াও যকৃত ভাল রাখতে তাদের প্রত্যেকদিনের মেনুতে থাকে পেঁপে। এ ছাড়াও সময়ে সময়ে পটল, ঝিঙে-সহ ফাইবার-যুক্ত বেশ কিছু টাটকা সবজি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাদের দেওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রত্যেক মাসে তাদের সারমেয়পিছু লাগে সাড়ে চার কিলো গমের ডালিয়া, তিন কিলো ভাল মানের চাল, সাড়ে সাতশো গ্রাম ডাল। সঙ্গে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে ৬ কিলো রেড মিট ও ৬ কিলো মুরগির মাংস। এই মাংস সম্পূর্ণ হাড় ছাড়া বা ‘বোনলেস’। কারণ, প্রত্যেক মাসে একেকটি কুকুরের জন্য আলাদাভাবে দেড় কিলো মাংসের হাড় কিনতে হয়। তাদের দাঁত শক্ত করার জন্য চিবোতে দেওয়া হয় হাড়। প্রত্যেকদিনই দু’বেলা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাঁধুনিরা সারমেয়দের জন্য রান্না করেন। একবেলা তাদের দেওয়া হয় ডালিয়া ও মাংস। অন্য বেলায় মাংস-ভাত। মাংস-ভাতে থাকে সবজি। রান্নায় সেভাবে তেল ব্যবহার না হলেও রসুন, নুন আর হলুদ থাকেই। তার জন্য পুলিশকে প্রত্যেকটি সারমেয়র জন্য প্রত্যেক মাসে কিনতে হয় দেড়শো গ্রাম করে নামী সংস্থার গুঁড়ো হলুদ ও নুন আর তিনশো গ্রাম করে কাঁচা রসুনও। সারা বছরই তাদের দই দেওয়া হয়। বিশেষ করে গরমে খাওয়ানো হয় ঘোল। তার জন্য পুলিশকে কিনতে হয় মাসে দেড় কিলো করে টক দই। এ ছাড়াও প্রত্যেকদিন ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় সিদ্ধ ডিম। তাই প্রত্যেকদিনই তাদের জন্য একটি করে ডিমসিদ্ধ বরাদ্দ থাকে। এ ছাড়াও মাসে প্রত্যেক সারমেয়র জন্য কেনা হয় তিন কিলো করে কম ফ্যাট-যুক্ত বিস্কুট। সাধারণভাবে সকাল ও বিকেলে তাদের জন্য বিস্কুট বরাদ্দ থাকে। কিন্তু মহড়ার সময়ও বিস্কুট সঙ্গে থাকে হ্যান্ডলারদের। তাঁদের কোনও নির্দেশ সফলভাবে পালন করলে পুরস্কার হিসাবেও দেওয়া হয় বিস্কুট।
লালবাজার জানিয়েছে, কলকাতার ডগ স্কোয়াডে ৪৮টি সারমেয় থাকতে পারে। সেখানে ৬ সারমেয় অবসরগ্রহণ করার পর এখন ৪২টি সারমেয় রয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতটি সারমেয় এবার অবসর গ্রহণ করার পথে। তাদের মধ্যে কে কে প্রথমে অবসর নেবে, তা নিয়ে চিকিৎসকরা আলোচনাও করছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও একটি সারমেয় প্রশিক্ষণ থেকে ফিরে যোগ দেবে। আরও দু’টি সারমেয় ডিসেম্বরে ওড়িশায় এনডিআরএফ-এর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিতে যাবে। এ ছাড়াও শূন্যপদ পূর্ণ করার জন্য নতুন সারমেয় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.