ফাইল ছবি।
গৌতম ব্রহ্ম: আট বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর পর তাই একাকীত্ব গ্রাস করে ফেলেছিল বেকার ‘সিজোফ্রেনিক’ মৈত্রেয় ভট্টাচার্যকে। এমনই আশঙ্কা মনোবিজ্ঞানীদের। তবে, মেডিক্যাল পরীক্ষার আগে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাইছেন না কেউ। তাঁদের বক্তব্য, অনেক কিছুই হতে পারে। তবে সিজোফ্রেনিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পিজির ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা এবং পাভলভ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. শর্মিলা সরকার, দু’জনেই রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে-র মেডিক্যাল টিমে ছিলেন। দু’জনেই সল্টলেকের ঘটনায় রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া দেখতে পেয়েছেন। প্রদীপবাবুর পর্যবেক্ষণ, “কাজ না করা, আশপাশ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, মায়ের দেহ আগলে থাকা– এ সব দেখে মনে হচ্ছে মৈত্রেয় ‘সিজোফ্রেনিয়া উইথ পুওর ড্রাগ কমপ্লায়েন্স’-এর শিকার। দীর্ঘদিন ওষুধ না খাওয়ায় এমন ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে মানসিক রোগ। কথা বললে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে যেভাবে মায়ের দেহ আগলে রেখে বসে ছিল তাতে মনে হয় ‘ডিলিউশন’-ও কাজ করছিল মৈত্রেয়র মনে।” আগে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরে একবার রবিনসন স্ট্রিটের মতো ঘটনা ঘটত। এখন প্রতি দু’-তিন মাসে দেখা যাচ্ছে। এর থেকে পরিষ্কার, নিউক্লিয়ার পরিবারের বীজতলায় মানসিক রোগের বিস্তার হচ্ছে। এমনই পর্যবেক্ষণ শর্মিলাদেবীর। বললেন, “নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের একাত্মতা বা টান বেশি হওয়াটা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে অভিভাবকের একজন চলে গেলে আর একজনকে হারানোর ভয় চেপে ধরে সন্তানকে। এক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে কি না দেখতে হবে।” শর্মিলার পর্যবেক্ষণ, “সবাই নিজেকে নিয়ে বড় ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। কেউ সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার চেষ্টা করলে প্রতিবেশীদের উচিত হস্তক্ষেপ করা। তবে যতটুকু শুনলাম তাতে মনে হচ্ছে ছেলেটির মানসিক সমস্যা ছিল।”
মৈত্রেয় বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। চিকিৎসক বাবা আগে মারা গিয়েছেন। নিজের বলতে ছিলেন শুধু অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মা। তাই মায়ের মৃত্য়ুর পর সম্ভবত ‘প্যাথলজিক্যাল গ্রিফ’ গ্রাস করেছিল মৈত্রেয়কে। সেই থেকেই প্রিয়জনের দেহ আটকে রাখার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল দুর্গন্ধ সহ্য করার ক্ষমতা। মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানসিক রোগের শিকড় কতটা গভীরে ডালপালা মেলেছিল, তা জানতে গেলে মৈত্রেয়র অতীত জানতে হবে। পড়াশোনায় কেমন ছিলেন, বন্ধুদের সঙ্গে কীভাবে মিশতেন, কতটা অন্তর্মুখী ছিলেন, নিজের মনে কথা বলতেন কি না, কতটা সন্দেহবাতিক ছিলেন ইত্যাদি। ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ‘সিজোফ্রেনিক’ ছিলেন মৈত্রেয়। রবিনসন স্ট্রিটের পার্থ দে-র মতো ‘সাইকোসিস’-ও ছোবল মারতে পারে। পরীক্ষা না করে বলা মুশকিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.