ফাইল ছবি
দীপঙ্কর মণ্ডল: বিনা টক্করে পঞ্চায়েত জয় নিয়ে মামলা গড়িয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগও হল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। যা নিয়ে বিস্তর চর্চা শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের তির খোদ উপাচার্যের দিকে। সরকারি চাকরিতে অগুনতি আবেদন আসাই দস্তুর। কিন্তু এক্ষেত্রে যাদবপুর যেন ব্যতিক্রমী। পদ একটি। আবেদন করেছিলেন চারজন। ইন্টারভিউয়ে ডাকা হল একজনকে। তাঁকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হল। আপাতভাবে যা বেআইনি। আইনজ্ঞরা বলছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তত দু’জন পদপ্রার্থীকে ডাকাই নিয়ম। কিন্তু দেশের প্রথম সারির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নজিরবিহীন কাণ্ড দেখে অনেকেরই চক্ষু চড়কগাছ। যদিও এহেন ‘বেপথু’ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সায় ছিল না অনেকের। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার লিখিতভাবে উপাচার্যকে সতর্ক করেছিলেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার অনুরোধসূচক ই-মেলের কপি এসেছে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর হাতে। অভিযোগ, উপাচার্য সুরঞ্জন দাস তা কানে তোলেননি। তাঁর নির্দেশেই নির্দিষ্ট একটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
[রেহাই নেই পড়ুয়াদেরও! এয়ারপোর্ট এলাকায় স্কুল বাসে হামলা বনধ সমর্থকদের]
সাতমাস আগে যাদবপুরের এডুকেশন বিভাগে ‘অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর’ পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয় একজনকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে নিয়োগপত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যাদবপুরের অধ্যাপকদের বক্তব্য, “যাঁকে ডাকা হয়েছিল তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন উঠেছে উপাচার্যর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে। নিয়োগে একজনকে ডেকে তাঁর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার নজির নেই।” যাদবপুরে এডুকেশন ছাড়াও কয়েকটি বিভাগে অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এডুকেশনে ‘অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর’ পদে শূন্য আসন দু’টি। সংরক্ষিত পদে এক ও অসংরক্ষিত পদে একজনকে নেওয়ার কথা। সোমবার সংরক্ষিত পদে দু’জনকে এবং অসংরক্ষিত পদে একজনকে ডাকা হয়। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তড়িঘড়ি নিয়োগের পিছনে নিশ্চিতভাবে কোনও কারণ আছে। যাঁকে নেওয়া হয়েছে তিনি যাদবপুরেই ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর’ পদে ছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞাপিত পদটি ছিল ‘অপেন ফর অল’। অর্থাৎ দেশের যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আবেদন আসতে পারত। যাদবপুরের অন্দরের খবর, মোট চারটি আবেদন জমা পড়েছিল। যোগ্যতা না থাকার কারণে তিনটি বাতিল হয়। বাকি একজনকেই ইন্টারভিউতে ডাকা হয়।
[ব্যাংক-সিম কার্ডে বাধ্যতামূলক নয় আধার, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের]
প্রশ্ন উঠেছে, হাতে সময় থাকা সত্ত্বেও কেন ফের বিজ্ঞাপন প্রকাশ হয়নি। রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, “কেউ আবেদন না করলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা ফের বিজ্ঞাপন দিয়ে আবেদনপত্র চাইতে পারতাম। উপাচার্যকে সেকথা জানিয়েও ছিলাম। তিনি সম্মতি দেননি। যাঁকে সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছিল তাঁকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।” তবে এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট আইন নেই বলে দাবি করেছেন রেজিস্ট্রার। চলতি মাসে স্নাতকোত্তরে তিন ছাত্রকে ভর্তি না নেওয়ায় কলকাতা হাই কোর্ট তীব্র ভর্ৎসনা করেছে যাদবপুরকে। ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কি নিজেদের কেমব্রিজ বা অক্সফোর্ড ভাবছে’, এমন কটাক্ষও করেছে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। গত জুলাইতে স্নাতকে ভর্তিতে কয়েকটি বিষয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকের মাঝে যাদবপুর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সুরঞ্জনবাবুকে তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, স্নাতকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অভিন্ন নিয়ম থাকবে না কেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অধ্যাপক নিয়োগে যাদবপুরের আকাশে ফের কালো মেঘের আনাগোনা দেখছেন পড়ুয়ারা।
[বনধের জেরে ঘনঘন পরীক্ষার সূচি বদল, বিক্ষোভে উত্তাল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.