ছবি: প্রতীকী
স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্য সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swasthya Sathi) গ্রাহ্য করতেই হবে। রোগীর চিকিৎসার জন্য সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য এমনই নির্দেশিকা জারি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল মানছে না সেই নির্দেশ। সেই তালিকায় এবার নাম উঠে এল নিউ আলিপুরের ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বা সিএমআরআই হাসপাতালের নামও।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে পায়েল রানি মান্না (২২)। গত ২৮ মার্চ নার্ভের সমস্যা নিয়ে কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন পায়েল। তাঁর বাবা বিশ্বজিৎ মান্নার অভিযোগ, ভর্তির সময় একাধিকবার হাসপাতালকে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের কথা। কিন্তু হাসপাতাল জানিয়ে দেয় কার্ড গ্রাহ্য নয়। চিকিৎসায় প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা বিল হয় পায়েলের। অত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না পায়েলের পরিবারের। জমি বেচে টাকা জোগাড় করে পায়েলের পরিবার। পায়েলের বাবার কথায়, ১৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা চালানোর পর আমাদের আর টানার সামর্থ্য ছিল না। সরকারি কোনও হাসপাতালে ওকে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করি। সেখানেও বিপদ। অভিযোগ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে বেড পাওয়ার পরেও রোগীকে ছুটি দিতে গড়িমসি করছিল সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ। ১৩ এপ্রিল দুপুর ১ টায় ডিসচার্জ করার কথা বলা হলেও শেষমেশ ছুটি দেওয়া হয় সন্ধে ছ’টায়। বিশ্বজিতের কথায়, এখন রোগীর চাপ মারাত্মক। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের বেডটা একটু হলেই হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিল। যদিও শেষপর্যন্ত এনআরএস-এই মারা গিয়েছেন পায়েল। এরপরই তাঁর বাবা সিএমআরআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে।
২০২০ সালেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও রোগী ফেরানো হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, যে হাসপাতালগুলিতে ১০টির বেশি শয্যা রয়েছে, সেগুলি বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আসবে। যদি তারা কোনও রোগীকে প্রত্যাখ্যান করে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, সিএমআরআই-এর বিরুদ্ধে মারাত্মক এই অভিযোগ আসার পরেই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশন চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, রোগীর পরিবার রোগী ভরতির সময় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের উল্লেখ করেনি। যদিও এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। মেয়ের চিকিৎসায় জমি বিক্রি করেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি বাবা। বিষয়টি মানবিক দিক দিয়ে বিচার করে পায়েলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কত টাকা ক্ষতিপূরণ পায়েলের পরিবারের হাতে দেওয়া হবে আজ শুক্রবার তা স্বাস্থ্য কমিশনকে জানাবে সিএমআরআই কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.