ফাইল ছবি।
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুতে লাগাতার আন্দোলনের জের। ‘নৈতিক দায়িত্ব’ নিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেন আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “আর অপমানিত হতে পারছি না। লাঞ্ছনা সহ্য করতে পারছি না।” অধ্যক্ষের পদত্যাগ যে সময়ের অপেক্ষামাত্র তা আগেই প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই অধ্যক্ষের পদত্যাগ করায় সেই খবরে সিলমোহর।
সোমবার সকালে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলেই অভিযোগ। তিনি বলেন, “আমাকে তাড়াতে ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার একঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে জানিয়েছি। সব সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। যে কুকুর, জানোয়াররা তরুণী চিকিৎসককে ছিঁড়ে খেয়েছে শাস্তি পাক। আমার বদনাম করা হয়েছে। রটানো হয়েছে আমি নাকি বলেছি তরুণী চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন, কেন একা ছিলেন? এসব আমি বলিনি। অপপ্রচার হয়েছে। আমার মুখে কথা বসিয়ে রাজনৈতিক খেলা চলছে।”
নাম না করে হাসপাতালেরই একদল চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। বলেন, “ডাক্তারদের মধ্যেও চোর, ডাকাত রয়েছে। আমি অর্থোপেডিক সার্জেন। আমি খেটে খেতে পারব। সকলে ভেবেছিল সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করতে পারেন না। আমি সৎ ব্যক্তি। আর জি করের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকের টাকা খাওয়া বন্ধ করেছিলাম। আগে হাসপাতাল থেকে ডেথ বা বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য আগে পয়সা দিতে হত। আমি এসব বন্ধ করেছি। এখন আর দিতে হয় না। যতদূর পেরেছি হাসপাতালের উন্নয়নে, রোগীদের স্বার্থে করেছি।”
এর পরই তিনি এই ঘটনার ‘নৈতিক দায়িত্ব’ নিয়ে স্বেচ্ছায় ইস্তফা দেওয়ার কথা জানান। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি। গত কয়েকদিন ধরে সোশাল মিডিয়া, সংবাদপত্রে যেভাবে আমার মুখে কথা বসিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছে তার ফলে আমি ও আমার পরিবার, সন্তান মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে যাচ্ছি। তাই কোনও চাপের মুখে নয়। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। কোনও রাজনৈতিক চাপ নয়।”
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে পড়ুয়াদের। তিনি পদত্যাগ না করলে হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়া যে সম্ভব নয়, তা মোটের উপর নিশ্চিত ছিল। রবিবার রাতে অধ্যক্ষকে নাকি সাফ জানানোই হয়েছিল যে হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক ও আর জি করের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে তাঁকে পদত্যাগ করতেই হবে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুখে স্বেচ্ছায় বলে দাবি করলেও, এই পদত্যাগ চাপের মুখে নতিস্বীকার ছাড়া আর কিছুই নয়।
এর আগে এই হাসপাতালের চারবারের সুপার ছিলেন সন্দীপ ঘোষ। সেই সময়ও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। এদিনের পদত্যাগের কথা ঘোষণার পরেও পালটা আর জি করের ছাত্রদের দাবি, “উনি যে পদত্যাগ করেছেন তার লিখিত কপি চাই। মুখের কথায় বিশ্বাস করি না। কেউ যদি বলে চাঁদে যাচ্ছি। এমনটা নয়।” দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.