অর্ণব আইচ: আমাদের নাম ইডিকে বলেছ কেন? আগে জেরার সময় নিশ্চয়ই সিবিআইকেও জানিয়েছ আমাদের নাম।
জেলে কুন্তলকে রীতিমতো বকাবকি পার্থর। ধমক দিয়েছেন মানিকও। তদন্তকারীদের কাছে কাঁদোকাঁদো মুখে জানান হুগলির যুব নেতা কুন্তল ঘোষ। বিষয়টি সিবিআই আধিকারিকদের কুন্তল জানিয়েছেন। এমনকী, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা জেলে গিয়ে জেরা করার সময়ও রীতিমতো ভীত হয়ে তাঁদেরও বিষয়টি জানান কুন্তল। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ফের জেল হেফাজত হলে আবার তাঁকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ধমক খেতে হতে পারে, কয়েকজন আধিকারিকের কাছে এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন ওই যুব নেতা।
এদিকে ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ে অবস্থান বদল করলেন কুন্তল। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সামনে তাঁর দাবি, “কাকু বলতে আমি আমার বাবার ভাইকে বুঝি। কালীঘাটের কাকুকে চিনি না।” উলটোদিকে আবার তাপস মণ্ডলের দাবি, কালীঘাটের কাকু সম্পর্কে সব জানে কুন্তল। আমি কিছু জানি না। ওকে জিজ্ঞেস করুন। সবমিলিয়ে ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে।
প্রথমে ইডির হাতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ। ইডির জেরার মুখে তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁর কাছ থেকে ইডি আধিকারিরা জানতে পারেন যে, কীভাবে দফায়-দফায় কুন্তল কোটি-কোটি টাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়াও এসএসসি দুর্নীতি টাকায় কুন্তল বেনামে যে শতাধিক গাড়ি কিনেছিলেন, তার মধ্যে অনেকগুলিই পার্থকে দেন তিনি। এমনকী, ২৫ কিলো ইলিশ মাছ তিনি গাড়ি করে খাদ্যরসিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। যেহেতু টেট পরীক্ষার বহু প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন কুন্তল ঘোষ, সেই টাকার একটি বড় অংশ মানিক ভট্টাচার্যের কাছেই যে গিয়েছে, সেই ইঙ্গিতও জানিয়েছিলেন কুন্তল। কুন্তলের কাছ থেকে বহু তথ্য জেনে আদালতেও পেশ করা হয়। সেগুলি ক্রমে বাইরেও চলে আসে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে সেই তথ্যগুলি জানতে পারেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পার্থবাবু প্রত্যেকদিনই প্রেসিডেন্সি জেলে তাঁর সেলের সামনে হাঁটাহাঁটি করেন। তাঁর সেলের কাছ দিয়ে অন্যান্য বন্দিরাও যাতায়াত করেন। কারা সূত্রে জানা গিয়েছে, সিবিআই কুন্তলকে হেফাজতে নেওয়ার আগে ইডির মামলায় জেলবন্দি কুন্তল তাঁর ওয়ার্ড থেকে পার্থবাবুর সেলের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই পার্থবাবু দেখতে পেয়ে তাঁকে ডাকেন। কুন্তল তাঁর কুশল জিজ্ঞাসা করা মাত্রই তাঁকে বকাবকি করতে শুরু করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি রীতিমতো হুমকি দিয়ে কুন্তলকে বলেন, কেন তিনি তাঁর নাম ইডি-র কাছে বলেছেন? কুন্তলের বক্তব্য অনুযায়ী, ইডি তাঁর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিতে পারেন, এমন শঙ্কা করে কুন্তলকেই দায়ী করতে থাকেন পার্থবাবু।
আধিকারিকদের কাছে কুন্তলের দাবি, পার্থবাবুর ধমক খাওয়ার দু’একদিনের মধ্যে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের সামনে পড়ে যান। তিনি তদন্তকারীদের কাছে মানিকের নাম বলে দিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে মানিকA কুন্তলকে ধমক ও হুমকি দেন। বিষয়টি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, জেলের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন কুন্তল ঘোষ।
বিষয়টি প্রেসিডেন্সি জেলের কয়েকজন আধিকারিক জানতে পারেন। তাঁদের বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে হয়। বিষয়টি তখনকার মতো মিটে গেলেও সম্প্রতি ইডি আধিকারিকরা জেলে গিয়ে কুন্তলকে জেরা করার সময় তা তাঁদের জানান ওই যুব নেতা। এরপর সিবিআই কুন্তলকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরও তিনি সিবিআই আধিকারিকদের বিষয়টি জানান। বৃহস্পতিবার ফের কুন্তলকে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হচ্ছে। ফের কুন্তলের জেল হেফাজত হলে ফের যাতে তিনি হুমকিতে আতঙ্কিত না হন, সেই ব্যাপারে নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.