গোবিন্দ রায়: বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট ও তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটানো নিয়ে কড়া অবস্থান নিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। আদালত অবমাননার ‘রুল ইস্যু’ সংক্রান্ত মামলার শুনানি শেষ হওয়া না পর্যন্ত হাই কোর্ট চত্বরে মিটিং-মিছিল-বিক্ষোভ বা পোস্টার সাঁটানো, সব বন্ধ। এমনকী, বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কট নিয়ে কোথাও কোনওরকম মিছিল-বিক্ষোভ-পোস্টার সাঁটানো চলবে না। এমন নির্দেশ তিন বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চের। কারা, কোথা থেকে বিচারপতির বিরুদ্ধে পোস্টার ছাপিয়েছিল, কারা বিচারপতির বাড়ির সামনে পোস্টার দিয়েছিল, তা জানতে চেয়ে কলকাতা পুলিশের সিপি, এসিপি ও লেক থানার ওসিকে নোটিস দিয়েছে আদালত। বিচারপতির এজলাস বয়কট নিয়ে আরও একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই শুনানিতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court)।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট ও বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া নিয়ে হাই কোর্টের রুজু করা স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্য বিচারপতির স্পেশ্যাল বেঞ্চ গঠন করেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। তিন সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি টিএস সিভাগনম, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এবং বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস। মঙ্গলবার এই বিশেষ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
এদিন তিন বিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এই মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাই কোর্ট চত্বরে কোনও মিটিং-মিছিল করা যাবে না। আদালত বা তার পাশে পোস্টার মারা যাবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। বিচারপতির বাড়ির সামনে পোস্টার মারার ঘটনার তদন্ত কতদূর, তা রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে। তিনি তদন্ত করে রিপোর্টে জানাবেন, পোস্টার কোথায় ছাপানো হয়েছে, বিচারপতির বাড়ির সামনে পোস্টার কারা মেরেছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে লেক থানা এবং কলকাতা হাই কোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতিরা। এজলাস বয়কটের ঘটনার দিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের সামনের সিসিটিভি ফুটেজের সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রার জেনারেল জানিয়েছেন, ৯, ১০ ও ১১ জানুয়ারির সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।
এদিন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষেণ, “এটা গুরুতর অভিযোগ। যে বা যারা (আইনজীবী) এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, মারাত্মক অপরাধ করেছেন। শুধু আদালতের কাজে বাধাদান নয়, বলপূর্বক বিচারব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।” বিচারপতি সিভাগনম বলেন, “কে বা কারা বিচারপতির বাড়ির সামনে বিচারপতির নামে পোস্টার মেরেছে,তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ পুলিশ পেনড্রাইভের মাধ্যমে ১১ জানুয়ারির সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিয়েছেন।”
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানোর ঘটনায় আরও একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। সেই মামলাতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে হবে রাজ্যকে। তার পালটা হলফনামা দেবেন মামলাকারীও। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জনস্বার্থ মামলায় পুলিশের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিকাশ ভট্টাচার্যের সওয়াল, ৪-৫ দিন হয়ে গিয়েছে, পুলিশ কী পদক্ষেপ করেছে জানা যায়নি। যারা পোস্টার লাগিয়েছে, তাদের খোঁজার কাজ পুলিশ শুরু করেছে কি না, তা-ও অজানা। এর পরই তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট জানতে চায় হাই কোর্ট। আগামী ৩০ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.