সুপর্ণা মজুমদার: বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বিনিয়োগের বার্তা দেওয়া নতুন কিছু নয়৷ তৃতীয় বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন তবু সাক্ষী থাকল অভূতপূর্ব কিছু মুহূর্তের৷ যখন দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রেক্ষিতে দেশের উন্নতিতে রাজ্যের উন্নয়নের সম্পর্ক তুলে ধরে, পশ্চিমবঙ্গকেই বিনিয়োগের ঠিকানা বলে চিহ্নিত করলেন খোদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ পাশাপাশি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে ঘরোয়া পরিবেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷
গতবছর মোট ২৬টি দেশের শিল্প প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন৷ এবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯৷ ছোট্ট এই পরিসংখ্যানই জানিয়ে দিচ্ছে বাংলার প্রতি বিশ্বের শিল্পমহলের আগ্রহ কতটা বেড়েছে৷ সে কথা তুলে ধরলেন খোদ রাষ্ট্রপতিও৷ উন্নয়নের প্রধান শর্ত হল, রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা, পরিকাঠামোর উন্নয়ন৷ অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের রাস্তা যত ভাল হয় উন্নয়নের উৎসমুখ ততই খুলে যায়৷ তুখোড় অর্থনীতিবিদ প্রণববাবু ঠিক সেই দিকটিই তুলে ধরলেন৷ গত পাঁচ-ছয় বছরে পশ্চিমবঙ্গ যেভাবে সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে বিনিয়োগের জন্য ক্রমশ আদর্শ হয়ে উঠেছে রাজ্য৷ বিশ্বের শিল্পপতিদের সামনে এমনটাই মত প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপতি৷ একাধারে তিনি অর্থনীতিবিদ, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি৷ তাই ঠিক কোন পরিবেশে বিনিয়োগের পথ সুগম হয় তা যেমন তাঁর থেকে ভাল কেউ জানেন না, ঠিক তেমনই কোন পথে দেশের উন্নতি সম্ভব তাও তিনি জানেন৷ আর তাই তাঁর মুখে উঠে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা৷ একটি রাজ্যের উন্নতি থেকেই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব৷ এই বার্তা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বললনে, ২০০৮ সালে সারা বিশ্ব যখন আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে, তখনও ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি৷ প্রভাব নিশ্চয়ই পড়েছে৷ তবে তা কাটিয়ে ক্রমশ সাবলীল হয়ে উঠেছে দেশ৷ এখন প্রতিটা রাজ্য যদি উন্নতির মুখ দেখে, তবে সামগ্রিক উন্নয়নে অনেকটাই এগিয়ে যাবে দেশ৷ এবং সেই নিরিখে পশ্চিমবঙ্গকে ফুল মার্কসই দিলেন প্রণববাবু৷ তিনি জানালেন, অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি দেখেছেন কীভাবে পশ্চিমবঙ্গের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চেপে বসেছিল৷ কিন্তু তা কাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে রাজ্যকে একটা স্বনির্ভর জায়গায় আনতে পেরেছেন, শিল্পের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত সদর্থক একটি বিজ্ঞাপন৷ শুধু ঋণ সামলানোই নয়৷ রেভিনিউয়ের দিক থেকেও এগিয়েছে রাজ্য৷ আর তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যকেই শিল্পপতিদের গন্তব্যের মর্যাদা দিতে দ্বিধা করেননি রাষ্ট্রপতি৷
একই আহ্বান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও৷ বাম আমলে শ্রমদিবস নষ্টের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল তা রাজ্য কাটিয়ে উঠেছে৷ যে সদর্থক পরিবর্তন বিগত কয়েক বছরে এসেছে তা তুলে ধরেই শিল্পপতিদের ডাক দেন তিনি৷ তবে আরও একটি বৈশিষ্টও তিনি তুলে ধরেন৷ তা হল রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ কর্পোরেট মেজাজ, বাণিজ্যের শর্ত, লাভ-লোকসান ইত্যাদি তো থাকবেই৷ তবে তার সঙ্গে একটা ঘরোয়া পরিবেশ এই রাজ্য তুলে দেবে, যা বাংলার একান্ত নিজস্ব সম্পদ৷ এ কথা শোনা গেল রাষ্ট্রপতির মুখেও৷ বিশ্বের শিল্পপতিদের তিনি জানালেন, তাঁরা যখন দেশে ফিরবেন তখন তাঁদের হৃদয়ে জেগে থাকবে বাংলার আতিথেয়তার সংস্কৃতি৷ পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি জানালেন, প্রান্তিক মানুষদেরও উন্নয়নের মূলস্রোতের সঙ্গে যোগ করতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর সাইকেল প্রদান প্রকল্পের প্রশংসা শোনা গেল প্রণববাবুর মুখে৷ এর ফলে সাইকেল তৈরির একটি আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে রাজ্য৷ রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাগুলোই সুচারুভাবে তুলে ধরেন তিনি৷ বাংলা যে শিল্পের পিঠস্থান হয়ে উঠতে ল্যান্ড ম্যাপ তৈরি করেছে, তাও এদিন শিল্পপতিদের জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷
সব মিলিয়ে বাংলার সংস্কৃতি ও শিল্পবান্ধব পরিবেশের ছবিটি নিখুঁতভাবেই তুলে ধরা হয় আগত শিল্পপ্রতিনিধিদের সামনে৷ আর তা ফুটিয়ে তুলতে রাষ্ট্রপতি যেভাবে সওয়াল করলেন, তা নিঃসন্দেহে তৃতীয় বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের বড় প্রাপ্তি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.