রাহুল চক্রবর্তী: প্রেসক্রিপশনের সশরীরে হাজিরা নেই। দোকানে গিয়ে দেখানো একটা ছবিতেই মিলছে ওষুধ। ঘটনাটা ঘটছে আকছারই। তা সে জেলা হোক আর শহরতলি। কিন্তু একটা ছবি দেখিয়ে ওষুধ দেওয়াকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলছেন চিকিৎসক থেকে ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরা। সকলেরই বক্তব্য, ডাক্তারের স্বাক্ষরিত প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়েই যেতে হবে ওষুধের দোকানে।
গত শুক্রবারের ঘটনা। বেলঘরিয়ার বাসিন্দা অনির্বাণ রায় তাঁর মায়ের জন্য এলাকারই একটি ওষুধের দোকানে ‘লিবোট্রিপ ডিএস’ কিনতে গিয়েছিলেন। মোবাইলে তোলা প্রেসক্রিপশনের ছবি দেখিয়েও ওষুধ মেলেনি। কিন্তু শেষ সাত মাস এভাবেই ওষুধ মিলেছিল। অনির্বাণবাবুর বক্তব্য, মাস সাতেক ধরে তাঁর মা প্রতিদিন রাতে একটি ‘লিবোট্রিপ ডিএস’ ওষুধ খাচ্ছেন। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের স্বাক্ষরিত প্রেসক্রিপশনটির ছবি মোবাইলে তোলা আছে। ওষুধের দোকানে গিয়ে ছবিটি দেখালেই তা দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল মাস সাতেক ধরে। কিন্তু এবারই তা দেওয়া হল না? ফার্মাসিস্ট দাবি করেছেন কোনও ছবি নয়। প্রেসক্রিপশনটি হাতে এনে দেখালেই ওষুধ মিলবে।
প্রশ্নটা এখানেই। অনির্বাণবাবুর মতো অনেকেই এখন প্রেসক্রিপশন হারিয়ে যাওয়া কিংবা ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। তারপর দোকান গিয়ে প্রেসক্রিপশনের ছবিটি দেখালেই ওষুধ মিলে যায়। অনেকেক্ষেত্রে আবার যে ওষুধ দীর্ঘদিন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা সেই সমস্ত রোগীরাও প্রেসক্রিপশনের ছবি দেখিয়ে ওষুধ কিনছেন। শহরের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুব্রত মণ্ডল বলেন, “ছবি দেখিয়ে ওষুধ কেনার বিষয়টা কোনওভাবেই বৈধ নয়। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের স্বাক্ষরিত প্রেসক্রিপশন হাতে করে ওষুধের দোকানে যেতে হবে। প্রেসক্রিপশনটি যাচাই করেই ওষুধ দেবেন ফার্মাসিস্ট। ছবি দেখে ওষুধ বিক্রি সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ একের প্রেসক্রিপশন অন্যজন ছবি তুলে ওষুধ কিনে নিতেই পারেন।” একই বক্তব্য, রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর স্বপন মণ্ডলের। তিনি বলেন, “লিবোট্রিপ ডিএস-এর মতো একাধিক ওষুধ রয়েছে সিডিউল এইচ ও এইচ ওয়ান ড্রাগের আওতাভুক্ত। যা রেসট্রিকটেড ড্রাগ। ফলত মোবাইলে তোলা ছবি দেখিয়ে সেই ওষুধ কেনা যায় না। প্রেসক্রিপশন পরীক্ষা করার প্রয়োজন থাকে। যা ছবি দেখে সম্ভব নয়। হাতেনাতে পরীক্ষা করতে হয়।” কোনও দোকানদার ছবি দেখে ওষুধ দিয়ে থাকলে, তা সঠিক পদ্ধতি নয় বলে জানিয়েছেন স্বপনবাবু।
বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সচিব তুষার চক্রবর্তী বলেন, “কনসাস দোকানদার কখনও প্রেসক্রিপশন হাতে না দেখে ওষুধ দেন না। প্রেসক্রিপশন ফোটো কপি করে নিয়ে এসে ওষুধ কেনা ও বিক্রির ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। সেটা বেআইনি। ছবি দেখে ওষুধ কোনওভাবে দেওয়া যায় না।” বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ মারফত প্রেসক্রিপশনের ফোটো কপি আপলোড করে অনলাইনে ওষুধ কেনা যায়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওই অ্যাপ কর্তৃপক্ষের প্রেসক্রিপশনটি পরীক্ষা করা জরুরি বলে মনে করে ড্রাগ কন্ট্রোল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.