দীপঙ্কর মণ্ডল: শতাধিক চিকিৎসকের ডিগ্রি অনিশ্চয়তার পথে। কলকাতার প্রতাপচন্দ্র মেমোরিয়াল হোমিওপ্যাথি হসপিটাল অ্যান্ড কলেজে প্রায় অচলাবস্থা। চলছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। শীর্ষপদে বসা নিয়ে রক্তও ঝরেছে। আদালতের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে এক পক্ষ জিতলেও বিজিতরা ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছেন। এসবের মাঝে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী।
হোমিওপ্যাথিতে বিএইচএমএস কোর্স সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই ডিগ্রি পেতে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যিক। তারপর সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা। ভাল র্যাঙ্ক থাকলে এ রাজ্যের ভর্তির কলেজে সুযোগ মেলে। এমবিবিএসের মতো বিএইচএমএস পড়তেও প্রচুর খরচ। সাড়ে পাঁচ বছরের পূর্ণ সময়ের স্নাতক কোর্স। এক বছর ইন্ট্রার্নশিপ বাধ্যতামূলক। সরকারি ভরতুকি সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ টাকা লাগে ডিগ্রি পেতে। পাস করে প্রায় সবাই প্র্যাকটিস শুরু করেন। সরকারি নিয়মে কলেজ থেকে পাঠানো ইন্টার্নশিপ সার্টিফিকেট দেখে চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন দেয় কাউন্সিল অফ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন। গত দু’টি শিক্ষাবর্ষে প্রতাপচন্দ্র মেমোরিয়াল থেকে পাঠানো সার্টিফিকেটগুলি নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
[সন্তান চাই না, শ্বশুরবাড়ি গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে খুন করল স্বামী!]
খাতায় কলমে প্রতাপচন্দ্র মেমোরিয়াল হোমিওপ্যাথি হসপিটাল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিধূভূষণ জানা। কিন্তু কলেজের দেওয়ালে এখন সাঁটা অন্যজনের নাম। নিজেকে ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ দাবি করেন অধ্যাপক সুখেন্দু সরকার। কলেজের ট্রাস্ট ও পরিচালন সমিতি তাঁকে নিয়োগ করেছে বলে দাবি। বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষ বিধূভূষণ আদালতে গিয়েছেন। আদালত তাঁর পক্ষে রায় দিয়েছে। কিন্তু অন্য পক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে। এসবের মাঝে ছাত্রছাত্রীদের ইন্টার্নশিপ সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করা সুখেন্দুবাবু। তাঁর স্বাক্ষর করার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা। তাঁদের বক্তব্য, ডিভিশন বেঞ্চে পুরনো রায় বহাল থাকলে শতাধিক পড়ুয়ার ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এমনটা মনে করছেন ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব অরূপ চন্দ্র। তিনি জানিয়েছেন, “একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অধ্যক্ষকে কলেজে ঢুকতে দিচ্ছে না। ইন্টার্নশিপ সার্টিফিকেটে আইন ভেঙে অন্যজন স্বাক্ষর করছেন। ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রি নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠবে।”
[বঙ্গে বিজেপির রথযাত্রার সূচনায় অমিত, এনআরসি ইস্যুতে পালটা কর্মসূচি বিজেপির]
ইতিমধ্যে বিধূভূষণবাবু কলেজে ঢুকতে গিয়ে মার খেয়েছেন। তারপর থেকে তিনি কলেজে যাওয়া বন্ধ করেছেন। অধ্যক্ষ না থাকায় গত দু’বছর অধ্যাপক এবং কর্মীদের বেতন বন্ধ। হাসপাতালের এমার্জেন্সি বন্ধ। অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম। ঢিমেতালে চলছে আউটডোর। ভর্তি থাকা রোগী প্রায় নেই বললেই চলে। এসবের মাঝে সবচেয়ে চিন্তায় আছেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের শংসাপত্রে কে স্বাক্ষর করবেন তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। যাঁরা গত দু’বছর শংসাপত্র গ্রহণ করেছেন তাঁদের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। হোমিওপ্যাথি কাউন্সিল এই বিষয়ে কোনও দায় নিচ্ছে না। কাউন্সিলের সভাপতি মৃণালকান্তি চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, “কে আসল অধ্যক্ষ তা জানতে চেয়ে কলেজকে চিঠি দিয়েছিলাম। উত্তরে জানানো হয়েছে সুখেন্দু সরকারের নাম। এই কারণে আমরা তাঁর স্বাক্ষর করা শংসাপত্রকে মান্যতা দিচ্ছি।” যাঁকে ঘিরে এত চর্চা সেই সুখেন্দুবাবুর বক্তব্য, “এখনও কোনও চিকিৎসকের অসুবিধে হয়নি। আমাকে যদি সরে যেতেও হয় তবু ছাত্রছাত্রীদের কোনও অসুবিধে হবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.