কৃষ্ণকুমার দাস: নির্মীয়মান অবস্থায় ভেঙে পড়ার পাঁচ বছর আড়াই মাস বাদে পোস্তা উড়ালপুলের অবশিষ্টাংশ পুরোপুরি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করছে কেএমডিএ। আগামী ১৫ জুন থেকে উত্তর কলকাতার এই ভগ্নাবশেষ সেতু দফায় দফায় সরিয়ে ফেলা হবে। আগেই নির্মাণ হওয়া ও ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা অংশটি সরিয়ে ফেলতে টেন্ডারের মাধ্যমে চারটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার কেএমডিএ, পোস্তার ব্যবসায়ী, পুলিশ ও পুরসভার শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পরিবহণমন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।
পোস্তার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ অর্ধসমাপ্ত উড়ালপুল সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যপ্রশাসক জানিয়েছেন, “পোস্তা উড়ালপুলের নির্মাণ হওয়া ঝুলন্ত অংশ সরিয়ে ফেলতে প্রথম পর্যায়ে ৪৫ দিন লাগবে। রাইটস পুরো প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত সাহায্য দিয়ে দেখভাল করবে। ভাঙার কাজ চলার সময় ব্রিজের নিচে ট্রাফিক রুটের কিছু পরিবর্তন হবে।” উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ দুপুরে পোস্তায় কেএমডিএ’র নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে ২৭ জনের মৃত্যু ও ৮০ জনের বেশি জখম হয়েছিল।
পোস্তার নির্মীয়মান বিবেকানন্দ উড়ালপুলের ১৫০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খড়গপুর আইআইটি’র তিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও তৎকালীন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ফ্লাইওভার নির্মাণকারী সংস্থা হায়দরাবাদের আইভিআরসিএলের বিরুদ্ধে ঘটনার পরদিনই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা দায়ের হয়। তদন্ত কমিটি দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দু’বছর পর রিপোর্ট দেয়, পোস্তা উড়ালপুলের নকশা ত্রুটিপূর্ণ ছিল ও যে রুটে উড়ালপুল গিয়েছে তা বিপজ্জনক। শুধু তাই নয়, ফ্লাইওভার নির্মাণের মশলা ও অন্যান্য সরঞ্জামের গুণগতমানও নির্দিষ্ট সময় অন্তর যাচাই করা হয়নি। তাই ইতিমধ্যে যতটুকু নির্মাণ হয়েছে সেই অংশও ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এরপরে মুম্বই থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে বিবেকানন্দ উড়ালপুল নিয়ে পরামর্শ চায় কেএমডিএ। মুম্বইয়ের বিশেষজ্ঞরাও ব্রিজটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নানা আইনি জটিলতা পেরিয়ে সেই ব্রিজটি ভেঙে ফেলতে ফেলতে আরও তিন বছর লেগে গেল।
গতবছর জগদ্ধাত্রী পুজোয় সময় পোস্তায় মুখ্যমন্ত্রী গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঝুলন্ত বিপজ্জনক উড়ালপুলের অবশিষ্টাংশ দ্রুত ভেঙে ফেলার আবেদন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এদিন পুরভবনে পোস্তা মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, রাজাকাটরার ব্যবসায়ী সংগঠন-সহ একাধিক সংগঠনের শীর্ষ কর্তাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন পরিবহণমন্ত্রী। ফিরহাদ জানান, “যাতে পোস্তার একটি বাড়ি বা দোকান ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা দেখার জন্যই বিশেষ অভিজ্ঞ সংস্থাকে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টিতে প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও সাহায্য দেবে রাইটস।” স্থানীয় থানায় বসে ট্রাফিক রুট ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে ব্যবসায়ী সংগঠন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। যখন উড়ালপুল ভাঙার কাজ চলবে তখন দরজা-জানলা বন্ধ রাখার পাশাপাশি বাড়ির বাইরে না আসার জন্য বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানান পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক। পোস্তার ব্যবসায়ীরাও এদিন বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, সামান্য অসুবিধা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লাইওভার ভেঙে ফাঁকা করার জন্য মাস দেড়েক অসুবিধা মেনে নিতে প্রস্তুত সবাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.