অভিরূপ দাস: উত্তরোত্তর বাড়ছে ডেঙ্গুর দাপট। ঠেকানোর একমাত্র উপায় মশারি। কিন্তু জিরাফের গলার মতো হাল ফ্যাশনের আবাসনে তার ঠাঁই নেই। দেওয়ালে মোটা টাকার ইন্টিরিয়র ডেকরেশন। আঁকিবুকি শৌখিন নকশা। সেখানে পেরেক ঠোকা যে বিড়ম্বনা! মুশকিল আসান হয়ে এসেছে পোর্টেবল মশারি। দেওয়ালে পেরেক ঠুকে টাঙানোর ঝকমারি নেই। স্রেফ তাঁবুর মতো খোলো, ঘুমাও, ঘুম থেকে উঠে ভাঁজ করে রেখে দাও। এমন সহজ সুরাহাতে মজে গিয়েছে শহরবাসী।
এতদিন একরত্তির জন্য এমন মশারি পাওয়া যেত। এবার তা রীতিমতো কিং সাইজ, কুইন সাইজে। অনায়াসে যার তলায় ঘুমোতে পারবেন চার থেকে পাঁচজন। গড়িয়াহাট, মানিকতলা, শ্যামবাজার, বড়বাজারে মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে পোর্টেবল মশারি। ক্রেতাদের আবদার, ‘‘দাদা ওই যে টাঙাতে হয় না, ওই মশারি এক পিস দিন।’’ একেকটি বিপণিতে দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না বিক্রেতারা।
যাদবপুরের অন্নপূর্ণা বেডিং স্টোর, বড়বাজার নেতাজি সুভাষ রোডের নিরোদালয় কিংবা রবীন্দ্র সরণির গৌরী মশারি স্টোর। সকাল থেকে দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না কর্মচারীরা। নিরোদালয়ের মালিক তপন গুঁই জানিয়েছেন, পোর্টেবল মশারির যা অর্ডার আসছে বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই। সাধারণ নাইলনের মশারির তুলনায় এহেন পোর্টেবল মশারির দাম অনেকটাই বেশি। সাধারণ সিঙ্গল বেডের নাইলন মশারি এক পিসের দাম ১১০ টাকা। ডাবল বেডের মশারির দাম ১৪০ টাকা থেকে ২১০ টাকা। সাত ফুট লম্বা ছ’ফুট চওড়া পোর্টেবল মশারির দাম সাড়ে আটশো টাকা। ছ’ফুট লম্বা চার ফুট চওড়া পোর্টেবল মশারি মিলছে সাড়ে সাতশো টাকায়।
কেন এত ফারাক? বিক্রেতারা বলছেন, দামী পোর্টেবল মশারির নেট বাংলাদেশ, তাইওয়ানের। অনেকটাই সূক্ষ্ম এবং পাতলা। সিলিং ফ্যানের হাওয়া এতে আটকায় না। তবে ক্রেতাদের পছন্দ অন্য কারণে। বড়বাজারের মশারি বিক্রেতা তপন গুঁইয়ের কথায়, ‘‘ঘুমানোর সময় মশারি টাঙাতে আলসেমি করেন অনেকেই। কেউ আবার বাড়ির দেওয়ালে ফুটো করতে গররাজি। এমন ক্রেতাদের জন্য মানানসই পোর্টেবল মশারি। টাঙানোর প্রয়োজন নেই। স্রেফ খুলে ফেললেই হল।’’
এদিকে গত বছরের দামে মিলছে না সাধারণ নাইলনের মশারিও। মশারির তৈরির সমস্ত উপকরণেরই দাম বেড়ে গিয়েছে এবছর। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভাল মানের মশারির নেটের দাম গতবছরও ছিল সাতাশ টাকা মিটার। এবছর তা ৩০ টাকা প্রতি মিটার। মশারির নিচের যে অংশটা বিছানায় গোজা হয় সেই কাপড়টিকে বলা হয় সঞ্জাব। সেই সাদা কাপড়ের দামও এবার অনেকটাই বেড়েছে। গত বছর সঞ্জাব ছিল ২৩ টাকা প্রতি মিটার। এবছর তা ২৬ টাকা প্রতি মিটারে পৌঁছে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দামী হয়েছে সাধারণ মশারিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.