ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ঘুমের ঠিকানা এবার মিলছে খাস কলকাতায়। কিন্তু চাহিদা এতই যে, অক্টোবর পর্যন্ত আর নতুন করে কাউকে ঘুমাতে দেওয়ার সুযোগ নেই। সব বেড বুক!
এসএসকেএম হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির দু’টি বেড অক্টোবর পর্যন্ত আর কাউকে দেওয়া যাবে না। যাঁরা বুক করেছেন, তাঁরা স্রেফ দু’টাকার টিকিট কেটে এই বেডে ঘুমাবেন। স্রেফ তিনদিনের জন্য!
এপ্রিলের প্রথম সকালে ঘুম থেকে উঠে বৈষ্ণবঘাটার অজিত চক্রবর্তী ডাক্তারবাবুকে বলছেন, ‘‘অনেকদিন পর ঝরঝরে লাগছে। তিনদিনে যেন তিনমাসের ঘুম হল।’’ শুনে আরএমও বলেছেন, ‘‘এবার থেকে বাড়িতে নিয়ম মেনে চলবেন। আর সমস্যা হবে না।’’
ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রিতে লাখ টাকা খরচ করে দু’টি যন্ত্র আনা হয়েছে। যন্ত্রের নাম ‘পলিসমনোগ্রাফি।’ আর এটিই হল ঘুমের যন্ত্র। আরও ভাল করে বললে ঠিক কী কারণে ঘুম আসে না তা বিশ্লেষণ করে এই যন্ত্র। ঘটনা হল, এই যন্ত্রের একটি বিশেষ গুণ আছে। রাতে বিছানায় শোওয়ার কিছুক্ষণ পরই অকাতরে ঘুমিয়ে পড়েন সেই ব্যক্তি। আর যন্ত্র তখন নিজের কাজ করতে থাকে।
‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’র অধির্কতা ডা. অমিত ভট্টাচার্যর কথায়,‘‘অনিদ্রায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দিনভর শারীরিক ও মানসিক চাপের পর ঘুম না হলে পরদিন ভাল করে কাজ করা যায় না। ঘুমের ঘাটতি মেটাতে এন্তার বাসে-ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েন অনেকে। এই যন্ত্রে ঘুম কেন আসে না এটা যেমন বিশ্লেষণ করা হয় তেমনই বিছানায় শোওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে শরীরের কোন রাসায়নিক ঘুম আনতে অনুঘটকের কাজ করে তারও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে দেয় এই যন্ত্র। বস্তুত, একঘুমে রাত কাবার যাতে হয়, তার সুলুক জানতেই অক্টোবর পর্যন্ত বুক হয়েছে দু’টি বেড।
‘পলিসমনোগ্রাফি’ যন্ত্র কী করে?
অমিতবাবুর কথায়, টানা ঘুমের জন্য কয়েকটি শর্ত দরকার। প্রথমত, রোগীর শরীরে স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে কি না? ঘুমের সময় যদি অক্সিজেনের ঘাটতি হয় অথবা নাক ডাকে বুঝতে হবে অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, উচ্চ রক্তচাপ, হাই সুগার বা ডায়াবেটিস থাকলে রোগীর টানা ঘুম হয় না। বারবার উঠতে হয়। আবার ঘরে-বাইরে টানা তীব্র মানসিক চাপ থাকলে দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না।’’
হাসপাতালের এক সিনিয়র কনসালট্যান্টের কথায়, ‘‘অনিদ্রায় ভোগা রোগীর বুক ও মস্তিষ্কের সঙ্গে যন্ত্র জুড়ে দিলে ম্যাগনেটিক ওয়েভের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে ঘুমের সময় সব অঙ্গ স্বাভাবিক কাজ করছে কি না? যেখানে অসুবিধা হবে, সেই জায়গা রেকর্ড হবে। পরে নাক ডাকার সমস্যা হলে ইএনটি এবং পালমোনলজিস্টের পরার্মশ নিতে হবে। তবে ঘুমের ওষুধ যতটা সম্ভব বাদ দিতে হবে।’’
কারা আসেন? অমিতবাবু বলেছেন,‘‘সরকারি হাসপাতাল কোটিপতি থেকে কেরানি, যাঁদেরই ঘুমের সমস্যা, তাঁরাই আসেন।’’ তিনদিনের মধ্যে অনিদ্রা সমস্যা মিটছে, তাই ক্রমশ চাপ বাড়ছে। আরও একটি বেড আনার জন্য স্বাস্থ্য ভবনে ফাইল পাঠানো হয়েছে। আবার শুচিবায়ুগ্রস্তদের সমস্যা কাটাতেও নতুন একটি যন্ত্র আনা হয়েছে। বাচ্চার মানসিক আঘাত ভুলিয়ে দিতেও খেলার মাধ্যমে থেরাপি করা হচ্ছে এই সংস্থায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.