নব্যেন্দু হাজরা: ময়না বলো তুমি….. ময়না কী বলবে? ঘাসফুল, নাকি পদ্ম? লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা আগে আপাতত এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন। যার উত্তর খুঁজতে রাস্তার গণৎকারের তোতা-টিয়া-ময়নার খাঁচার সামনে উড়ে যাচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে নোট। কোন দলের ঝুলিতে কত আসন যাবে, এনিয়ে বাজি ধরেছেন বহু লোক। বাজিমাত হবে কি না, তার আন্দাজ পেতে অনেকেই উবু হয়ে বসছেন গণক টিয়ার সামনে।
তর যেন আর সইছে না। আরও দুটো দিন। কিন্তু এই সময়টা কাটবে কী করে? এক্সিট পোল এমনিতেই অনেক অঙ্ক গুলিয়ে দিয়েছে। কারও মুখে চওড়া হাসি, কারও মুখে অন্ধকার। রবিবার রাত থেকেই তাই উঠেছে তর্করে তুফান। চায়ের দোকান থেকে পাড়ার রক। কে ক’টা পাবে তা নিয়ে চলছে বাজি ধরার পালা। উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরেই তাই কেউ ছুটছেন জ্যোতিষঘরে, কেউ বা টিয়ায় খাঁচার সামনে। টিয়ার ঠোঁট দিয়ে ওঠা সংখ্যাই পাবে দল। এমন আশায় ভর করে সোমবার সকালেই হাওড়া ব্রিজে হাজির বৈদ্যবাটির সুবিমল রায়। ভাগ্যে বিশ্বাস করেন। মনে করেন ভাগ্য বদলানো সম্ভব। তাঁর দল কত পাবে সেই সংখ্যা বলতে পারবে টিয়াই। আর তা জানতেই ট্রেনে চড়ে আসা হাওড়ায়। সঙ্গী আরও জনা চারেক বন্ধু। তাঁরাও দু’দিন আগেই জেনে নিতে চাইছেন দল কত পাবে এবার! পাঁচ হাজার টাকা বাজি ধরেছেন বন্ধুদের সঙ্গে।
এক্সিট পোলের ফলাফলে মাথার চুল খাড়া। তাই স্থির থাকতে না পেরে একেবারে টিয়ার দুয়ারে তাঁরা। একটু যাঁরা বিত্তবান তাঁরা আবার ছুটছেন একেবারে জ্যোতিষঘরে। যদি কোনওভাবে বদলে দেওয়া যায় ভাগ্যটা। সামান্য কিছু তুকতাক করে কিছুটা আগে জেতা-হারাটা জেনে নেওয়া যায়। “কী করব, সারা বছর ধরে দলটা করি। টেনশন আর ধরে রাখতে পারছি না। আগে থেকে মোটামুটি একটু আভাস পেয়ে যাওয়া আর কি! আসলে এখানে যিনি রয়েছেন, তাঁর কথা আমার মিলে যায়। অগাধ ভরসা।” সোমবার উত্তর কলকাতার এক জ্যোতিষীর চেম্বার থেকে বেরনোর সময় বলছিলেন বিরোধী দলের এক অনুগামী। তাবিজ-কবজ কিছু একটা করে ‘দাদা’-‘দিদি’কে জেতাতে জানপ্রাণ বাজি রাখতে রাজি মেজো-সেজো নেতারা।
হরস্কোপের ভাল-মন্দ বা সংখ্যাতত্ত্বের বিচার করে ‘একটু ভাগ্য’ বদলানোর এমন মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়াও করতে চান না জ্যোতিষীরা। তাই রাজনৈতিক দলের কর্মীদের সামলাতে একেবারে কম্পিউটার খুলে আগে থেকেই প্রার্থীর নামের ভাল-মন্দ বিচারে ব্যস্ত তাঁরা। নামের বিচারে ২৩ তারিখ কার শুভ, কার অশুভ, যাবতীয় বিষয়ই নিষ্ঠার সঙ্গে দেখছেন। শুধু কি তাই! সকালে উঠে কোন রঙের পোশাক পরলে ফলাফলটা নিজের অনুকূলে আসবে, তা-ও অনেকেই বিচার করে রেখেছেন প্রার্থীরা। রাজ্যের শাসক দলের বহু সেজো-মেজো নেতারাও ছুটেছেন তাবিজ-কবজের সন্ধানে।
নিজের না হোক, নিজের নেতাকে সাংসদ দেখতে চেষ্টার কসুর করছেন না। কানে কানে অনেকেই সিদ্ধমন্ত্রও নিয়ে এসেছেন। তবে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের আসন সংখ্যা জানতে ভেতো বাঙালি বেশি বসছেন টিয়ার খাচার সামনে। টিয়া যা তুলছে তা মনের মধ্যে সম্বল করেই ফিরছেন বাড়ি। হাওড়ার ব্রিজে বসেন গণৎকার বলরাম শাস্ত্রী যেমন বললেন, “সোমবার থেকে ব্যবসা রাতারাতি বেড়েছে। প্রচুর মানুষ আসছেন। কেউ আবার তাবিজ-কবজও নিচ্ছেন। সবাই অবশ্য একই জিনিস জানতে চাইছেন, কারা ক’টা পাবে! আর নিজের পছন্দের প্রার্থী জিতছে কিনা! টিয়া যা তুলছে সেটা হবেই বলছি না। তবু অনেকেই তো এসব মানেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.