ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: পুজোয় ট্রাফিক যেন সমস্যার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশকে অনুরোধ জানাল কলকাতার বেশ কিছু নামী পুজো কমিটি। রবিবার জি ডি বিড়লা সভাঘরে শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে বসেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক বড় পুজো কমিটিই ট্রাফিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন লালবাজারের পুলিশকর্তাদের সামনে।
দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘের পুজো উদ্যোক্তা স্বরূপ বিশ্বাস জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে চেতলার লক গেট সারাইয়ের কাজ হচ্ছে। সুরুচি সংঘ ছাড়াও চেতলায় আরও দু’টি বড় পুজো হয়। ব্রিজ বন্ধ থাকায় পুজোর সময় গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। সৃষ্টি হয় যানজট। ভিড় ঠেলে এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে যেতে সমস্যায় পড়েন দর্শনার্থীরা। বুড়ো শিবতলা মেন রেড, টালিগঞ্জ ফাঁড়ির সেতুতেও যানজট থাকে। চেতলা অগ্রণীর কর্মকর্তা সৌম্য মুখোপাধ্যায় জানান, চেতলা লকগেট বন্ধ থাকায় দুর্গাপুর ব্রিজের উপর চাপ বাড়ছে। এছাড়াও রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে নিউ আলিপুর, বেহালায় যানজট লেগে থাকে।
বেহালার ২৯ পল্লির এক উদ্যোক্তা জানান, বেহালায় ডায়মন্ডহারবার রোডে যানজট থাকে। একটু রাত হতেই জেমস লং সরণিতে বাইকের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। টালিগঞ্জের প্রতাপাদিত্য ত্রিকোণ পার্ক বারোয়ারির পক্ষে জানানো হয়, এলাকায় মাতৃসদন হাসপাতাল থাকার ফলে পুজোয় যদি ট্রাফিক সমস্যা থাকে, তবে অ্যাম্বুল্যান্স আটকে যেতে পারে। রোগীরা পড়তে পারেন সমস্যায়। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডে বাইকের বেআইনি পার্কিং হয়। গড়িয়াহাটের হিন্দুস্থান পার্ক সার্বজনীন দুর্গোৎসবের পক্ষে সুতপা দাস জানান, মণ্ডপের কাছে কার পার্কিং হয়। ব্যারিকেড থাকায় রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে যায়। তাতেই দুই লেনে গাড়ি চলে। সেখানে যানজট এড়াতে ওয়ান ওয়ের পরামর্শ দেন তিনি। তেলেঙ্গাবাগান সার্বজনীনের পক্ষে এলাকার ট্রাফিকের সমস্যাও তুলে ধরে তা দেখতে অনুরোধ জানানো হয়।
পুলিশ কমিশনার পুজো উদ্যোক্তাদের বক্তব্য শুনে মঞ্চ থেকেই ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), ডিসি (ট্রাফিক)কে নির্দেশ দেন, তাঁরা যেন নিজেরা ওই এলাকাগুলিতে গিয়ে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। প্রয়োজনমতো ব্যারিকেড ও গার্ডরেল বসিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা যাতে মসৃণ থাকে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে পুজো উদ্যোক্তাদের আশ্বাস দেন তিনি। এদিন বৈঠকে পুলিশ কমিশনার জানান, কলকাতার দুর্গোপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশবিদেশ থেকে বহু মানুষ আসবেন কলকাতার পুজো দেখতে।
পুজোর দিনগুলিতে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে। প্রত্যেকে যেন নিরাপদে ও আনন্দের সঙ্গে উৎসবে সামিল হতে পরেন, তার জন্য কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে পুলিশ সকাল থেকেই প্রত্যেকটি প্রান্তে সজাগ থাকবে, যাতে কোনও পুজো দর্শনার্থীর সামান্যতম অসুবিধাও না হয়। কোনওরকমের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুজো কমিটিগুলির সহযোগিতা চান তিনি। এই বছরও কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে সেরা পুজোর জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি পুজো কমিটিগুলিকে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
পুজো কমিটিগুলিকে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, এবার ডিজে নিয়ে পুলিশ অত্যন্ত কড়াকড়ি করছে। বিসর্জনের রাস্তা ও ঘাটগুলিতে যাতে কোনওমতে ডিজে না থাকে, তার জন্য পুজো কমিটিগুলিকেই নজর রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। ডিজে থাকলেই কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চতুর্থী থেকেই কলকাতায় বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা থাকছে। ৫ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুজোর বিসর্জন শুরু। ৮ অক্টোবর রেড রোডে কার্নিভাল। লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জন ১০ অক্টোবর। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে পুজোর অনুমতির জন্য ‘আসান’ চালু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২৩২৪টি। আবেদন জমা পড়েছে ২০৭৮টি। কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে ৯৬২টি অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মহালয়ার আগেই এই অনুমতি নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। সোমবার থেকে ক্লাবগুলিকে চেক দেওয়ার কাজ শুরু হতে পারে। প্রত্যেক ডিভিশনে পাঠানো হচ্ছে লিফলেট, যাতে হাই কোর্টের নির্দেশ উল্লেখ করা থাকছে। বুধবার সিইএসসি ইলেকট্রিসিয়ানদের ভারচুয়াল পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেবে। পুজোর ‘সবুজ ফর্ম’ অনেকেই জমা দেননি বলে পরিবেশ দফতরের কর্তা পুজো কমিটিগুলিকে জানান। পুজো উদ্যোক্তারা রাস্তায় জল জমা নিয়ে অনুযোগ জানান। গাছের ডাল ছাঁটা, রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো, ঘাট পরিষ্কারের ব্যাপারে পুরসভাকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান পুজো উদ্যোক্তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.