অর্ণব আইচ: করোনা আবহে দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2021) যাতে কোনও প্রকার সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে লালবাজার। এবছর কলকাতার প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপে মোতায়েন থাকছে পুলিশ। আগে মূলত বড় পুজো মণ্ডপগুলির উপর বেশি নজর থাকত পুলিশের। এলাকার বারোয়ারি ছোট মণ্ডপগুলির উপর থানার পক্ষ থেকেই নজর রাখা হত। কিন্তু এই বছর লালবাজারের নির্দেশ, প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপে অন্তত দু’জন করে পুলিশকর্মী ডিউটিতে থাকবেন।
কলকাতার ২ হাজার ৭০১টি মণ্ডপে মোতায়েন থাকছেন ২ হাজার ৫৪৫ জন অফিসার ও ১২ হাজার ৯৪৭ জন পুলিশকর্মী। পুজোর দিনগুলিতে রাস্তায় নামবেন প্রায় ২০ হাজার পুলিশ। পুজোয় কলকাতায় যানজট এড়াতে যাতে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং না হয়, সেই ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ ও প্রত্যেকটি থানাকে কড়া নির্দেশ দিলেন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। বৃহস্পতিবার আলিপুর বডিগার্ড লাইনে পুলিশকর্তা ও থানার ওসিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে পুলিশ কমিশনার জানান, পুলিশের কোনও গাড়িও যদি নিয়ম না মেনে যেখানে সেখানে পার্কিং করে, তবে সেই গাড়ির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাই কোর্ট ও রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে পুজো করতে হবে। পুজোর সময় রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ নজর রাখবে যাতে যানের গতি মসৃণ থাকে। পুজোর সময় বাইরে থেকে বহু মানুষ কলকাতায় আসেন। তাই শহরের হোটেল ও রেস্তরাঁর উপরও কড়া নজর রাখতে হবে।
জানা গিয়েছে, তৃতীয়াতেই কিছু সংখ্যক পুলিশ নামবে রাস্তায়। চতুর্থী থেকে পুরোদমে শুরু হবে পুলিশি পাহারা। এবছর পুজোয় ৩১টি নতুন সিটি পেট্রোল টহল দেবে, যাতে অস্ত্র নিয়ে থাকছেন পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশকর্মীরা। লালবাজারের নির্দেশ, পুজো মণ্ডপগুলিতে যেন পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ রাখা হয়। বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে ভোর, রাত বারোটা থেকে সকাল আটটা ও সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটে, এই তিন শিফটে মণ্ডপ ও রাস্তায় পুলিশ থাকছে। ঠাকুর দেখতে এসে বহু তরুণ-তরুণী বেশি রাতে সরকারি বাসের ভাড়া দিতে চান না। তাই বেশি রাতে বাস চালাতে ভয় পান কিছু বাস চালক। তাঁদের যেন অসুবিধা না হয়, তার জন্য রাত দশটার পর ওয়্যারলেস পেট্রোল গাড়িকে বাসের উপর নজর রাখতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেহেতু নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, তাই পুলিশকে পুজোর সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। মণ্ডপে ছিনতাইকারী, পকেটমার, ইভটিজারদের উপর নজর রাখতে হবে সাদা পোশাকের পুলিশকে।
আইন ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য নিতে হবে থানার কোঅর্ডিনেশন কমিটির। পুজো মণ্ডপের কাছে ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগস্থলে পথচারী ও গাড়িদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কোনও হকার বসতে দেওয়া হবে না বা ফুডস্টল থাকবে না। নিরাপত্তার জন্য মণ্ডপের কাছে থাকবেন না কোনও গ্যাস বেলুন বিক্রেতা। প্রত্যেকটি পিকেটের উপর নজর থাকবে পুলিশকর্তাদের।
লালবাজারের নির্দেশ, ডিউটিতে থাকা প্রত্যেক পুলিশকর্মী ও আধিকারিককে পরিষ্কার ও স্মার্ট ইউনিফর্ম পরে থাকতে হবে। পুজোর সময় লাখো মানুষের সামনে তাঁদেরই রক্ষা করতে হবে কলকাতা পুলিশের সম্মান। ক্রাউড সার্কুলশন সামলাতে পুলিশ অফিসারদের মাইক ব্যবহার করতে হবে। কলকাতার ৩৮টি জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা রাখবে। যেহেতু দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী ক্রসিং থেকে সাতটি পুজো মণ্ডপে যাওয়া যায়, তাই ওই জায়গাটিতে থাকছে অতিরিক্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ। বড় পুজো মণ্ডপগুলির আশপাশে ভিড় ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে স্কেচ তৈরি করবে পুলিশ। ভিড়ের মধ্যে কোনও বস্তু ঘিরে আতঙ্ক হলে যাতে পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা না ঘটে, সেই ব্যাপারেও নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিরাপত্তার জন্য কী কী থাকছে?
পিসিআর গাড়ি ২৬টি
বিশেষ হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড ১৩টি
হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড ২২টি
বিশেষ সিটি পেট্রোল ৩১টি
কুইক রেসপন্স টিম ১৩টি
ওয়াচ টাওয়ার ৫৪টি
সিসিটিভি ৮৯টি
বড় পুজো মণ্ডপে পুলিশ সহায়তা ক্যাম্প ও রাস্তায় কিয়স্ক
মোবাইল পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট ভ্যান ৭টি
ট্রাফিক পুলিশ সহায়তা বুথ ৬টি
দমকলের এসকর্ট ভ্যান ১৩টি
পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স ও ট্রমা কেয়ার ২৮টি
মিসিং পার্সন স্কোয়াডের গাড়ি ৬টি
৭টি মন্দির ও ৬টি বেড়ানোর জায়গায় বিশেষ নজরদারি
নাকা ১৫টি
মোট স্ট্যাইকিং ফোর্স ২০টি
ডিভিশনাল রিজার্ভ ৯টি
দূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিম ৯টি
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.