ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: এ যেন রোমহর্ষক উপন্যাস কিংবা থ্রিলারকেও হার মানায়! তপসিয়ায় যুবক খুনের ঘটনার রহস্যভেদ করতে গিয়ে পরতে পরতে যেভাবে তার জট খুললেন তদন্তকারীরা, তাতে তাঁরা নিজেরাই তাজ্জব। পরবর্তী সময়ে সেই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে শিহরিত হচ্ছেন তাঁরাও। ঘটনাস্থলের বেশ কয়েকটি খটকার উত্তরই তপসিয়ায় (Topsia)৩০ বছরের যুবক অভিজিৎ রজক খুনে অভিযুক্ত হিসেবে তাঁরই বড় কাকা এবং বউদিকে ধরিয়ে দিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার তদন্তকারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে দেখেন, বাড়ির চাবিটি যথাযথ স্থানেই রয়েছে। সেখানেই প্রথম প্রশ্ন ওঠে। পরিবারের সদস্যদের দাবি অনুযায়ী, সাইকেল চুরির ঘটনা দেখে ফেলায় অভিজিৎকে খুন হতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে চোর চাবি নিয়ে গেট খুললে কি এতটাই যত্ন করে স্বস্থানে রেখে যাবে? যে সাইকেল চুরি হয়েছে, তার টায়ার পাংচার ছিল। কেন চোর সেই সাইকেল নিয়ে পালাবে? দ্বিতীয় খটকা – থ্রি ডি ক্যামেরার UV স্ক্যানারে তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, বাড়িতে সবজি কাটার ছুরিতে রক্ত লেগে রয়েছে। তা যথেষ্ট সন্দেহজনক বলে মনে হয়। এরপর তদন্তকারীরা বারবার জানতে চান যে বাড়ির কে কখন অভিজিৎকে শেষবার দেখেছিল। তাতে একেকজনের একেকরকম বয়ানে ধন্দ তৈরি হয়।
পরিবারের সদস্যরা আরও জানান যে চোর বাড়ির পিছনের গেট দিয়ে এসেছিল। তার উপর ভিত্তি করে তদন্ত এগোতে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, পিছনের গেটের দিকে আগাছা ভরতি। অথচ যে রাস্তা পিছনের গেট থেকে পুকুরের দিকে গিয়েছে, সেখানে আগাছা পরিষ্কার করা। কেন গেটের সামনের দিক বাদ দিয়ে দূরের আগাছা পরিষ্কার করা হল? এই প্রশ্ন ভাবায় পুলিশকে। পুকুরে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চলে। কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে পরেরদিন পাড়ার কয়েকজন যুবক পুকুরে স্নান করতে নেমে শক্ত কোনও জিনিসের অস্তিত্ব টের পান। তাঁরাই পুলিশকে জানান। পুলিশ ফের ডুবুরি নামিয়ে দেখতে পায়, দুটি সাইকেল রয়েছে পুকুরে। অর্থাৎ সেগুলো চুরি যায়নি এবং চুরির গল্প বানানো। সাইকেল উদ্ধার হওয়ায় অভিজিতের বউদি প্রিয়াঙ্কা রজকের ভাবভঙ্গিই পালটে যায়। তাতেই সন্দেহ গাঢ় হয় তদন্তকারীদের। শনিবার বেলায় প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
টানা ১২ ঘণ্টা ধরে বছর উনত্রিশের প্রিয়াঙ্কা রজককে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন অভিজিতের চরিত্র ভাল ছিল না। বারবার প্রায় সমবয়সি বউদি প্রিয়াঙ্কার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে সে। পরিবার এবং প্রতিবেশীরা একাধিকবার শাসন করে তাকে। তবু স্বভাব পালটায়নি। বিরক্ত প্রিয়াঙ্কা শ্বশুর চন্দন রজকের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করে যে অভিজিৎকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া বাড়িতে অভিজিতের জন্য আলাদা একটি ঘর তৈরি নিয়েও ঝামেলা চলছিল। ফলে পরিকল্পনামাফিক সোমবার গভীর রাতে তাকে খুন করা হয়। মাথায় আঘাত করে, ছুরি দিয়ে গলার নলি কেটে একেবারে নিকেশ করা হয়। সেই কারণেই বাড়ির সবজি কাটার ছুরিতে রক্ত দেখেছিলেন তদন্তকারীরা। সমস্তটা শুনে পুলিশ অভিজিতের বড় কাকা চন্দন রজককেও গ্রেপ্তার করে। পরিবারের আর কেউ জড়িত কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.