ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: কসবায় সিবিআই (CBI) সেজে অপহরণের গ্যাংয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ এক মহিলা? অপহরণের তদন্ত করে এই সন্দেহ গোয়েন্দাদের। অপহরণের ঘটনার সময় উপস্থিত থেকে ভুয়ো পরিচয়পত্র বের করে ওই মহিলা নিজেকে সিবিআই অফিসার বলে পরিচয় দেয়, অভিযোগ এমনই। ওই মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তবে ইতিমধ্যে শিখা বিশ্বাস নামে মহিলাকেও। তবে তিনিই আসল ‘মাস্টারমাইন্ড’ কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, হরিদেবপুরের ওই মহিলা ওই ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টের নকল আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
এদিকে, সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে এসেই অপহরণকারীদের দু’টি গাড়ির নম্বর মুখস্থ করে নিয়েছিলেন অপহৃত ব্যবসায়ীর বন্ধু। ব্যবসায়ীর সেই বন্ধুর ‘গোয়েন্দাগিরি’তেই ধরা পড়ে সিবিআই সেজে অপহরণকারীদের গ্যাং। শনিবার শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় অপহরণকাণ্ডে দুই অভিযুক্ত অভিষেক সেনগুপ্ত ও তার সঙ্গী স্বরূপ ঘোষকে। এদিন দু’জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। তাদের ৩ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
গত সোমবার দক্ষিণ কলকাতার কসবার বোসপুকুর পূর্বপাড়া থেকে সিবিআই সেজে অজিত রায় নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে একটি গ্যাং। প্রথমে দু’কোটি ও তার পর ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ওই টাকা নিয়ে ব্যবসায়ীকে মুক্ত করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে আসা অভিযোগ অনুযায়ী, তিনটি গাড়ি করে অপহরণকারীরা আসে। তার মধ্যে একটি গাড়ির মাথায় ছিল নীল আলো। বাড়ির মধ্যে ঢুকেছিল সাতজন পুরুষ ও একজন মহিলা। তাদের মধ্যে ওই মহিলা সিবিআইয়ের একটি পরিচয়পত্র দেখায়। ওই পরিচয়পত্র যে ভুয়ো, তাতে পুলিশের সন্দেহ নেই। তারা সিবিআই পরিচয় দিয়েই ব্যবসায়ীর অফিস থেকে তিনটি ল্যাপটপ, একটি হার্ড ডিস্ক ও ফাইলভর্তি কাগজপত্র নিয়ে নেয়। এমনকী, আলমারি তছনছ করে তারা টাকা ও সোনার গয়নার খোঁজ করে। ধমক দিয়ে কেড়ে নেওয়া হয় ব্যবসায়ীর দু’টি মোবাইল। তাদের চালচলন ও চলাফেরা ছিল পুলিশ বা সিবিআইয়ের মতোই। তাই ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও পরিবারের লোকেরাও সন্দেহ করেননি। এখনও পর্যন্ত এই গ্যাংয়ে ১২ জন ছিল বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, অপহরণের ঘটনার আগেই ব্যবসায়ীর পরিচিত ও ‘বন্ধু’ স্বরূপ রায় তাঁর বাড়িতে উপস্থিত ছিল। কসবার বাড়িতে স্বরূপের সামনেই ভুয়ো সিবিআইয়ের তল্লাশি চলে। কিন্তু কেউ বুঝতে পারেননি যে, ‘বন্ধু’ স্বরূপ নিজেই অপহরণকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। তাই যাওয়ার সময় অপহরণকারীরা স্বরূপকেও ‘সঙ্গে ধরে নিয়ে যায়।’ যাওয়ার সময় তারা বলেও যায় যে, নিজাম প্যালেসের সিবিআই দপ্তরে ব্যবসায়ীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
যদিও তদন্ত শুরু করার পর প্রথম দিনেই স্বরূপ রায়কে জেরা করতেই সে ভেঙে পড়ে। তাকে গ্রেপ্তার করার পর এই গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের সন্ধান মেলে। উদ্ধার হয় তিনটি গাড়ি। অপহরণের পর স্বামীর খোঁজ করতে ব্যবসায়ীর স্ত্রী, স্বামীর দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে নিজাম প্যালেসে যান। কিন্তু সিবিআইয়ের তরফ থেকে তাঁদের বলা হয় যে, এই ধরনের কোনও গ্রেপ্তারি হয়নি। এতে কিছুটা হতবাক হয়ে যখন বাড়িতে ফিরে আসছেন, তখন ব্যবসায়ীর বন্ধুর মোবাইলেই ফোন করে জানানো হয় যে, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা না পেলে তাঁকে খুন করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। দরাদরির পর মুক্তিপণের ১৫ লাখ টাকা একটি নীল ব্যাগে করে নিয়ে যান ব্যবসায়ীর বন্ধু। দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী মোড়ের একটি সুলভ কমপ্লেক্সের কাছে সাদা জামা পরা দুই ব্যক্তি এসে বন্ধুর নাম জিজ্ঞাসা করে ওই টাকাভরতি ব্যাগ নেয়। একজন একটি সাদা গাড়িতে ওঠে। অপরজন অন্য একটি সাদা গাড়ি করে চলে যায়। ব্যবসায়ীর ওই বন্ধু দু’টি গাড়ির নম্বরই মুখস্থ করে রেখেছিলেন। দু’টি গাড়ির নম্বরই পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়। গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত শুরু করে সিসিটিভিতেও ওই গাড়িগুলি দেখতে পায়। দু’টি গাড়ির নম্বরের ভিত্তিতেই তদন্ত করে প্রথমে তিনজন ও তার পর পুরো গ্যাংটিকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের জেরা করা আরও কিছু তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.