স্টাফ রিপোর্টার: কোনও বড় অপরাধ সংগঠিত করার জন্য কি মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে রেইকি করতে এসেছিল ধৃত যুবক? শনিবার রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে রবিবার সকাল সাড়ে আটটা, প্রায় সোয়া সাত ঘণ্টা ধরে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে লুকিয়ে বসে সে কী করছিল? এই ধরনের বহু প্রশ্নের উত্তর পেতে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের যুবক হাফিজুল মোল্লাকে টানা জেরা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাকে সঙ্গে নিয়ে হবে ঘটনার পুনর্গঠনও।
শনিবার গভীর রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কালীঘাটের বাসভবনে নিরাপত্তারক্ষীদের অজান্তে প্রবেশ করে এক যুবক। রবিবার সকালে তাকে একটি গাড়ির পিছনে বসে থাকতে দেখা যায়। এর পরই সতর্ক হয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। দুপুর সোয়া দু’টোয় রাজ্যের ডিরেক্টরেট অফ সিকিউরিটির এক ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিকের করা অভিযোগের ভিত্তিতে হাফিজুল মোল্লাকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৫৮ ধারায় কাউকে আঘাত বা হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে কোনও বাড়িতে অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট থানার পুলিশ। সোমবার ৩১ বছর বয়সের হাফিজুলকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন সরকারি আইনজীবী। ১১ জুলাই পর্যন্ত ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশের অভিযোগ, অভিযুক্তর কাছ থেকে একটি লোহার রড উদ্ধার হয়েছে। ফলে তার নাশকতা বা হামলার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগেও হাফিজুল নবান্নের নিরাপত্তা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল। তখন তাকে আটক করে হাওড়ার শিবপুর থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে ধৃত হাফিজুলকে জেরায় মিলেছে বেশ কিছু অসঙ্গতি। একবার সে দাবি করেছে, লালবাজার মনে করে এখানে ঢুকে পড়েছিল। আবার অন্য সময় বলেছে, চাকরির আবেদন করতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল সে। কখনও বলেছে, ‘দিদি’কে খুবই ভাল লাগে বলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চায়। যদিও তার আসল উদ্দেশ্য পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। হাফিজুলের পরিবারের দাবি, সে মানসিকভাবে অসুস্থ ও চিকিৎসারত।
এদিন আলিপুর আদালতে আবেদনে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ধৃত হাফিজুল মোল্লাকে জেরা করে কীভাবে সে নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে প্রবেশ করল, সে আরও কোনও বড় অপরাধ সংগঠিত বা নাশকতার উদ্দেশ্যে রেইকি করেছিল কি না, এভাবে তার অনুপ্রবেশের আসল উদ্দেশ্য কী, তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কি না, এই ধরনের বহু উত্তর পেতে তাকে জেরার প্রয়োজন। ধৃতর পক্ষে লিগাল এইডের এক আইনজীবী ছাড়া অন্য কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি।
জেরায় ধৃত নিজেকে হাওড়ার একটি সংস্থার কর্মী, আবার কখনও গাড়ি চালক বলেও পরিচয় দিয়েছে। হাসনাবাদে আশারিয়া নারায়ণপুরের বাসিন্দা ধৃত হাফিজুলের বাবা মইদুল মোল্লা দাবি করেন, তাঁর ছেলে গত ৬ মাস ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। একাধিক জায়গায় ছেলের মানসিক চিকিৎসা চলেছে। সে ওষুধও খায়। যখন ওষুধ খায় না, তখনই স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের অন্যদের মারধর ও অস্বাভাবিক আচরণ করে। সেই কারণে জেলা ও কলকাতায় আগেও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। তিনি পুলিশকে প্রেসক্রিপশনও দেখিয়েছেন। যদিও এই দাবি পুলিশ যাচাই করছে। প্রয়োজনে চিকিৎসকদেরও সাহায্য নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.