ছবি: ফাইল
অর্ণব আইচ: গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা ঊর্মিলা জুন্ডের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকঘণ্টা। তবে এখনও পর্যন্ত খুনের কারণ নিয়ে ধন্দে পুলিশ। ব্যক্তিগত শত্রুতা নাকি অন্য কিছু, খুনের নেপথ্যে কারণ ঠিক কী? পরিচিত কেউ নাকি খুনে জড়িয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ অপরিচিত কোনও ব্যক্তি, একটি খুনকে কেন্দ্র করে এমনই নানা প্রশ্নের ভিড়। সমস্ত প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে আপাতত নিহত ওই বৃদ্ধার আত্মীয়দের জেরা করছে পুলিশ।
গড়িয়াহাটের গরচা ফার্স্ট লেনের দোতলা বাড়ির একতলায় বাস জুন্ড পরিবারের। বহু বছর ধরে এই ভাড়াবাড়িতে বসবাস তাঁদের। পাঞ্জাব এবং কলকাতায় ব্যবসা থাকায় অর্থাভাব নেই। ঊর্মিলা জুন্ডের স্বামী চৌহার সিং মারা গিয়েছেন অন্তত সাত বছর আগে। কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন বৃদ্ধার বড় ছেলে মনদীপ। তাঁর স্ত্রী ডিম্পল দুই কিশোরী মেয়েকে নিয়ে রিচি রোডে থাকেন। মেজো ছেলে থাকেন শিলিগুড়িতে। বৃদ্ধার ছোট ছেলে বলরাজ ওরফে রানে কলকাতায় স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে থাকেন। তিনি পারিবারিক ব্যবসা দেখভাল করেন। বৃদ্ধা বহুদিন পাঞ্জাবে কাটানোর পর কলকাতায় আসেন মাসখানেক আগেই। এখানে আসার পর থেকে কখন গরচা, আবার কখনও রিচি রোডে থাকতেন ওই বৃদ্ধা। তবে ৯ ডিসেম্বর ছোট ছেলে রানে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কোচবিহারে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। তাই দিনকয়েক গরচার বাড়িতে একাই ছিলেন ওই বৃদ্ধা। ঠাকুমার রাতের খাবার নিয়ে বুধবার রাতে ওই বৃদ্ধার বড় ছেলের মেয়েরা আসেন। তারপর খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েন বৃদ্ধা। এদিকে, ঠাকুমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে রিচি রোডের বাড়িতে চলে যায় দুই কিশোরী নাতনি।
এরপর বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ পরিচারিকা ওই বৃদ্ধার বাড়িতে কাজ করতে আসেন। দরজা খোলা থাকায় সোজা ভিতরে ঢুকে যান। ঢুকেই বৃদ্ধার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পান। জড়ো হয়ে যান প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। একটুও সময় নষ্ট না করে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। পুলিশের অনুমান, কোনও আক্রোশ থেকে খুনের সময় বৃদ্ধার উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হয় বৃদ্ধাকে। তবে তাতে বাধা দিলে গলা, বুক এবং পেটে একাধিকবার কোপানো হয় তাঁকে। তলপেটও আড়াআড়িভাবে চিরে দেওয়া হয়। খুনের পর আলাদা করে দেওয়া হয় ধড় এবং মুণ্ড। প্রমাণ লোপাটের জন্য ঘটনাস্থল ভাল করে ধুয়েও দেওয়া হয়।
পুলিশের সন্দেহ পরিচিত কেউই খুনের সঙ্গে জড়িত। খুনি বাড়ির গলি দিয়ে এসে কোনওভাবে দরজা টপকে বৃদ্ধার শোয়ার ঘরে ঢুকে হামলা চালায় বলে অনুমান। তবে ঠিক কী কারণে খুন করা হল তাঁকে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বৃদ্ধার ঘরের আলমারি এবং ড্রয়ার লন্ডভন্ড ছিল। তবে বৃদ্ধার সোনার গয়না, পঞ্চাশটি ২০০টাকার নোট, মোবাইল খোওয়া যায়নি। তাই লুটপাটের উদ্দেশে যে তাঁকে খুন করা হয়নি তা কিছুটা হলেও স্পষ্ট। তবে কি খুনের নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ, তা খতিয়ে দেখছেন আধিকারিকরা। পুলিশ ইতিমধ্যেই বৃদ্ধার ছোট ছেলে-সহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়কে জেরা করছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.