অর্ণব আইচ: ইজ্জত কা সওয়াল। “বাঁচাতে হবে মহল্লার ইজ্জত। এখনই এনআরএস চল।” গত সোমবার রাতে এলাকার যুবকদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে মালবাহী গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এনআরএস হাসপাতালে। যেতে চাননি অনেকে। বলেছিলেন, গোলমাল হলেই পুলিশে ধরবে। এলাকার কয়েকজন তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, “ধরলে পেটি কেস। সকালেই আমরা ছাড়িয়ে নেব।” এলাকার ওই মানুষগুলোর উপর ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিবিবাগান লেনের বাসিন্দাদের।
তাঁদের দাবি, যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁরা সঙ্গে গিয়েছিলেন মাত্র। ধৃত পাঁচজনের মধ্যে দু’জন জামশেদপুর ও হায়দরাবাদে কাজ করেন। ইদের ছুটিতে কলকাতায় এসেছিলেন। একজন অনলাইনে খাবার সরবরাহ সংস্থার কর্মী ও অন্যজন তাঁর বন্ধু। সেই সূত্র ধরে পুলিশেরও প্রশ্ন, এনআরএস হাসপাতালে হামলায় ইন্ধন জুগিয়েছিল কারা? তারাই মালবাহী গাড়ি জোগাড় করেছিল। রাতে ১৫ ও ১৬ নম্বর বিবিবাগান লেন থেকে ছেলেদের নিয়ে গিয়েছিল হাসপাতালে। ওই ইন্ধনকারীদের সন্ধানও চালানো হচ্ছে। এখনও এই ঘটনায় খোঁজ চলছে পলাতক দু’জনের।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, মৃত রোগীর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ অনুযায়ী, যে জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের মারধর করেছিলেন, তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পরিবহর দিকে কে ইট বা পাথর ছুড়েছিল, তা নিয়ে এখনও পুলিশ ধন্দে। হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজের সাহায্যেই তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। রীতিমতো পরিকল্পনা করেই যে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা চালানো হয়েছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত পুলিশ।
[ আরও পড়ুন: অচলাবস্থার দায় নিয়ে পদত্যাগ এনআরএসের সুপার এবং প্রিন্সিপালের ]
বিবিবাগানের বাসিন্দারা জানান, এনআরএস-কাণ্ডে ধৃত মহম্মদ ইয়াকুব ও মহম্মদ আনোয়ার আগে থাকতেন ওই এলাকায়। ইয়াকুবের ভাই মহম্মদ শামিম জানান, বহু বছর আগে বিহারের দ্বারভাঙার একটি মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হয়েছিলেন ইয়াকুব। কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই এক তরুণীর সঙ্গে প্রেম। শেষে ধাক্কা খেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এখন হায়দরাবাদের কাছে একটি জায়গায় কাজ করেন। ইয়াকুবেরই বন্ধু মহম্মদ আনোয়ার কাজ করেন জামশেদপুরের একটি সংস্থায়। দু’জনই অবিবাহিত। প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরও ইদের ছুটিতে তাঁরা কলকাতায় এসেছিলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। বাসিন্দাদের দাবি, রাতে তাঁরা ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। রাত এগারোটা নাগাদ এলাকার কয়েকজন ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি তাঁদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, “মহল্লার ইজ্জতের প্রশ্ন। হাসপাতালে গিয়ে বডি ছাড়াতে হবে।” এভাবে আনোয়ার, ইয়াকুবদের মতো অন্য যুবকদেরও মালবাহী গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরই এনআরএসে শুরু হয় গোলমাল।
এনআরএস-কাণ্ডে আদিল হারুনের মা দাবি করেন, তাঁর ছেলে নির্দোষ। ছেলে আদিল বাইক নিয়ে খাবার সরবরাহ করতে যান এনআরএসের কাছে। গোলমালের মধ্যে পড়ে বাইক ছেড়ে তিনি পালিয়ে যান। সেই বাইক পুলিশ আটক করে। পরের দিন আদিল ও প্রতিবেশী বন্ধু মহম্মদ শাহনওয়াজ বাইক আনতে গেলে তাঁদের ধরা হয়। যদিও পুলিশের দাবি, ঘটনাস্থল থেকেই প্রত্যেককে ধরা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে দু’জনের নাম জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। যারা গোলমাল করতে এগিয়ে এসেছিল, শুধু তাদের মধ্যে থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[ আরও পড়ুন: ‘আমাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আসুন’, ফের ডাক্তারদের সমর্থনে পোস্ট ফিরহাদ-কন্যার ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.