অর্ণব আইচ: ফুলবাগান (Phoolbagan) কাণ্ডের কিনারায় ৭ মার্চ অমিতের গতিবিধির উপর নজরদারি পুলিশের। লকডাউনের আগে ওইদিনই বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় এসেছিলেন অমিত আগরওয়াল। তিনি সেদিনই মুঙ্গেরের কোনও দালালের কাছ থেকে সেভেন এমএম পিস্তল নিয়েছিলেন কিনা, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অমিত যে মানিকতলা মেন রোডে শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়ার ফ্ল্যাটে এসেছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত করে জানা গিয়েছে, লকডাউনের আগে তিনি শেষ এসেছিলেন ৭ মার্চ। সেদিন পাঁচ ঘণ্টার জন্য বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসেন অমিত। ওইদিন তিনি মানিকতলার ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। সিসিটিভি দেখে এই বিষয়ে কিছু তথ্য মিলেছে। একই দিনে তিনি বেঙ্গালুরুতে ফিরে যান। তিনি ওইদিন শ্বশুরবাড়িতেও যাননি। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, যদি ফেব্রুয়ারি মাসে অমিত বিহারের অস্ত্র পাচারকারীর কাছ থেকে পিস্তলটি জোগাড় করে রাখেন, তবে মার্চ মাসে তিনি সেটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানার জন্য এসেছিলেন, এমন হওয়া সম্ভব। পুলিশের ধারণা, লকডাউন যদি না হত, এপ্রিলেই স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের খুন করতেন অমিত। তাই আনলক শুরু হওয়ার পরে তিনি আর দেরি করেননি।
এদিকে, মৃত হলেও ফুলবাগানের রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের ঘটনায় অভিযুক্ত অমিত আগরওয়ালের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারে পুলিশ। এই বিষয়টি নিয়ে পুলিশ আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছে। অমিত আগরওয়ালের শ্বশুর সুভাষ ঢনঢনিয়া তাঁর জামাইয়ের বিরুদ্ধে স্ত্রী ললিতাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। যথাযথ প্রমাণও জোগাড় করতে হচ্ছে পুলিশকে। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, তদন্তর শেষে অমিতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করার কথা ভাবা হচ্ছে। যদি চার্জশিট দাখিল করা না যায়, তবে এই মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়বে। সেক্ষেত্রে আদালতে অমিতের ডেথ সার্টিফিকেট জমা করে জানানো হবে যে, তিনি আত্মঘাতী। ফলে এই মামলার শুনানি আর হবে না। যদিও যে ব্যক্তি অমিতকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল, সে ধরা পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে দাখিল করা হতে পারে চার্জশিট।
জানা গিয়েছে, এর আগে নদিয়ায় একটি খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত আত্মঘাতী হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে বেঙ্গালুরু পুলিশও মৃত অমিতের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। বেঙ্গালুরুর মহাদেবপুর থানায় স্ত্রী শিল্পীকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে অমিতের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, অমিত আগরওয়ালের লেখা ৬৭ পাতার সুইসাইড নোট একটি বড় প্রমাণ। প্রিন্ট করা হলেও তার শেষের পাতা হাতে লেখা। সেখানে স্পষ্টই বলা রয়েছে স্ত্রী শিল্পীকে বেঙ্গালুরুতে খুন করে কলকাতায় তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকদের খুন করে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়াও খুনের বড় সাক্ষী অমিতের শ্বশুর ও বাড়ির পরিচারিকা। কারণ দুজনেরই দাবি, তাঁদের সামনে যখন ললিতাকে খুন করা হচ্ছে, তখন তাঁরা পালিয়ে যান। খুন করে আত্মহত্যার প্রমাণ নেওয়া হবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, যেভাবে এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়, সেভাবেই মৃত অমিতের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। শুধু এ ক্ষেত্রে তাকে জেরা করার কোন উপায় নেই। সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত শেষ হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.