ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: এমনিতেই কলকাতার (Kolkata) পর পর দশটি এটিএমে জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তরা অধরা। তার উপর ফের নতুন আরও এক পদ্ধতিতে এটিএম জালিয়াতির ঘটনা এল পুলিশের সামনে। ইতিমধ্যে এই নতুন জালিয়াতির ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আসফাক নামে ধৃত ওই যুবকের সঙ্গীরা মেরঠের বাসিন্দা বলেই ধারণা পুলিশের। কলকাতায় যে দশটি এটিএমে জালিয়াতি হয়েছে, সেই ঘটনার পিছনেও মেরঠের বাসিন্দারা রয়েছে বলেই সন্দেহ পুলিশের। ধৃত যুবকের সঙ্গী জালিয়াতদের সন্ধানে ফরিদাবাদ ও দিল্লি গিয়েছে পুলিশের টিম।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিল্লি, গাজিয়াবাদ ও ফরিদাবাদে লালবাজারের গোয়েন্দাদের একাধিক টিম তল্লাশিও চালায়। সিসিটিভির ফুটেজে কয়েকটি গাড়ির ছবি পাওয়া গিয়েছে। কয়েকটি গাড়ির নম্বরও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তার মাধ্যমেই চলছে তল্লাশি। জানা গিয়েছে, দিল্লিতে কয়েকজনকে পুলিশ জেরাও করেছে। গোয়েন্দাদের কাছে খবর, বিহারের কোনও জায়গা থেকে সম্ভবত ওই জালিয়াতরা জোগাড় করেছিল ‘ব্ল্যাক বক্স’ নামে ওই ডিভাইস। এর পর ম্যালওয়্যারের সাহায্যেই তুলে নেওয়া হয় টাকা।
পুলিশ জানিয়েছে, এই বছরের প্রথম থেকেই কলকাতায় হানা দিতে শুরু করে এটিএম জালিয়াতরা। প্রায় ৬ মাস আগে পর্ণশ্রী এলাকার একটি এটিএমে তারা যেভাবে জালিয়াতি চালিয়েছে, তার সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে সম্প্রতি দশটি এটিএমে হওয়া জালিয়াতির। যদিও ওই জালিয়াতির ঘটনায় কিছুটা নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এই ঘটনায়ও জালিয়াতরা প্রথমে এটিএমের উপরের আবরণ খুলে কম্পিউটার ‘রিবুট’ বা ফের চালু করে। একটি ম্যালওয়্যারের সাহায্যেই এটিএমের মাদারবোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সার্ভারের। এর পর একটি এটিএম কার্ড যন্ত্রে প্রবেশ করায়। ওই এটিএম কার্ডটি জালিয়াতদেরই। প্রথমে জালিয়াতদের নিজেদের অ্যাকাউন্টে থাকা কিছু টাকা বের করে। বিশেষ কয়েকটি এটিএম রয়েছে, সেগুলিতে টাকা বের হওয়ার পর কেউ না নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রের ভিতরে চলে যায় ও ওই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টেই ফের জমা পড়ে। এই এটিএমগুলিকেই মূলত টার্গেট করে জালিয়াতরা। জালিয়াতদের ম্যালওয়্যার ওই কম্পিউটারের সিস্টেমকে এমনভাবে পাল্টে দেয় যে, বেরিয়ে আসা টাকা জালিয়াতরা নিয়ে নিলেও কম্পিউটার মনে করে, গ্রাহক সেই টাকা গ্রহণ করেনি। তাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘ভারচুয়ালি’ সেই টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। তাই ফের জালিয়াতরা এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলে নেয়। কিন্তু কম্পিউটারকে বুঝতে দেওয়া হয় না যে, টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার ‘ভারচুয়ালি’ ফের ওই টাকা ফেরত নিয়ে নেয়। এভাবে জালিয়াতরা পর্ণশ্রীর এটিএম থেকে ১৮ বার ওই কা়র্ডটি ব্যবহার করে আড়াই লাখেরও বেশি টাকা তুলে নেয়।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে তদন্তের সময় এটিএম থেকে ওই এটিএম কার্ডের বিস্তারিত তথ্য পুলিশ পেয়ে যায়। সেই সূত্র ধরেই উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আসফাক নামে জালিয়াতির অভিযুক্তকে পুলিশ ধরে ফেলে। পুলিশের ধারণা, এর পরই জালিয়াতরা পদ্ধতি পাল্টায়। নতুন পদ্ধতিতে টাকা তোলার সময় এটিএম কার্ড ব্যবহার করা হলেও কার্ডের কোনও তথ্য এটিএমে রেকর্ড হয় না। তাই কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতদের সন্ধান পাওয়া সম্ভবই হয় না। যদিও ধৃত আসফাককে জের করে কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের সন্ধানেও চলছে তল্লাশি। তাদের সন্ধান পেলে কলকাতায় দশটি এটিএমে জালিয়াতির অভিযুক্তদের সন্ধান মিলতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.