অর্ণব আইচ: আড়াই মাসের মাথায় গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় চার্জশিট পেশ করল পুলিশ। গত ডিসেম্বরে গড়চার বাসিন্দা উর্মিলা জুন্ড নামে ওই বৃদ্ধা খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল নাতনি, বড়ছেলের স্ত্রী ও তার প্রেমিকের। ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। শুরু হয় তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষী জোগাড়ের কাজ। তদন্তের পর শনিবার ধৃত ৩ জনের নামে পেশ করা হল চার্জশিট।
গত ডিসেম্বরে গড়িয়াহাটে বৃদ্ধা খুনের নৃশংসতায় শিউড়ে উঠেছিল শহর। ১২ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ঊর্মিলা জুন্ডের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তদন্তে জানা যায়, প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হয় বৃদ্ধাকে। তবে তাতে বাধা দিলে গলা, বুক এবং পেটে একাধিকবার কোপানো হয় তাঁকে। তলপেটও আড়াআড়িভাবে চিরে দেওয়া হয়। খুনের পর আলাদা করে দেওয়া হয় ধড় এবং মুণ্ড। প্রমাণ লোপাটের জন্য ঘটনাস্থল ভাল করে ধুয়েও দেওয়া হয়। তদন্ত শুরুর পর পুলিশ আধিকারিকদের ভাবনা বাড়িয়ে দেয় বৃদ্ধার বড়ছেলের স্ত্রী ও নাতনির আচরণ।
এরপরই বৃদ্ধার পরিজনদের জেরা করেতেই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয় তদন্তকারীদের কাছে। পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিহতের পুত্রবধূ ডিম্পল এবং তার প্রেমিক সৌরভ ও নাবালিকা মেয়েকে। তাদের জেরা করে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পারে ঠাকুমার অতিরিক্ত দাপুটে মেজাজ এবং সংসারে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে বেশ বিরক্ত ছিল নাতনি। সেই কারণে মায়ের পরিকল্পনায় শামিল হয় বড় মেয়ে। কিন্তু কীভাবে এই ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে গেল ডিম্পলের প্রেমিক? পুলিশের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জেরায় মা ও মেয়ে জানায়, শাশুড়িকে খুনের জন্য রীতিমতো চক্রান্ত করে পাঞ্জাব থেকে ডেকে আনা হয় সৌরভকে। ঘটনার রাতে প্রথমে নাতনি ঠাকুমাকে খাবার খাওয়ায়। তাতেই মিশিয়ে দেওয়া ছিল ঘুমের ওষুধ। তাই খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন ঊর্মিলা জুন্ড। এরপরই ধারালো অস্ত্র নিয়ে বাড়িতে ঢোকে ডিম্পল এবং তার প্রেমিক সৌরভ। প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বৃদ্ধাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে পেট আড়াআড়িভাবে চিরে দেওয়া হয়। সব শেষে ধড় এবং মুণ্ড আলাদা করে দেওয়া হয় তাঁর।
জেরায় উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তখনই জানা যায় যে, খুনের জড়িত মৃতার নাতনি নাবালিকা। বয়স অনুযায়ী খুনের নৃশংসতা ভাবাতে শুরু করে তদন্তকারীদের। এরপর মনোবিদদের পরামর্শ নিলে, ধৃত নাবালিকাকে পরীক্ষা করে তাঁরা জানান যে, তার বয়স ১৭ হলেও মানসিক ও শারীরিক দিক থেকে সে প্রাপ্ত বয়স্ক। এরপর সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে ৭৯ দিনের মাথায় ওই নাবালিকা-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করল পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.