ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: যাদবপুরে তরুণীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় আটক তাঁর পুরুষসঙ্গী। এছাড়া মৃতার দিদি ও জামাইবাবুকেও আটক করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে আটক করা হয় প্রত্যেককে।
নাম ভাঁড়িয়ে দুই বোন ‘সঙ্গী’দের সঙ্গে আলাদাভাবে থাকছিলেন ঘর ভাড়া নিয়ে। মৃত মহিলা বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন অপর্ণা সর্দার (৩৬)। তাঁর সঙ্গীর নাম বাপি সর্দার, ‘দিদি’ হচ্ছেন স্বপ্না সর্দার ও ‘জামাইবাবু’ সুজয় সর্দার। স্বপ্না ও সুজয় থাকতেন পাশেই অন্য একটি ঘরে। এক ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, মৃত অপর্ণা সর্দারের আসল নাম রূপদাসী। তাঁর ‘দিদি’ বলে পরিচয় দেওয়া স্বপ্নার আসল নাম লক্ষ্মী। দু’জনেরই বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা এলাকার কালুয়াখালিতে। সুজয় স্বপ্না ওরফে লক্ষ্মীর স্বামী কি না, তা নিয়েও পুলিশ ধন্দে।
আপাতত পুলিশ বাপি, স্বপ্না ও সুজয়কে আটক করেছে। পুলিশের কাছে তরুণীর সঙ্গী দাবি করেছেন, শনিবার দু’জনের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়েছিল। তারপর বাড়ি থেকে চলে যান তিনি। রবিবার জানতে পারেন, গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তরুণী। সঙ্গিনী আত্মহত্যাই যদি করেন তবে ওই যুবক কেন গা ঢাকা দিয়েছিলেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। তরুণীর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার অপেক্ষায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বাড়িওয়ালা লক্ষ্মী মণ্ডলের বালিকা কন্যা জল তোলার জন্য বাইরে থেকে অপর্ণাকে ডাকে। কিন্তু ঘরের দরজা ছিল তালাবন্ধ। সন্দেহের বশে ওই বালিকা ঘরের পলিথিন সরিয়েই চমকে ওঠে। দেখে, মেঝেয় পড়ে রয়েছেন অপর্ণা সর্দার। মেয়েটি চিৎকার করে উঠতেই এলাকার বাসিন্দারা তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। খবর পেয়ে পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দারা দেহটি দেখে বুঝতে পারে যে, মহিলাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
বাড়িওয়ালার সঙ্গে শনিবার রাত ন’টা নাগাদ অপর্ণার কথা হয়। অপর্ণা তথা রূপদাসীর সঙ্গী বাপিকে খুব সকালে কয়েকজন দেখেন। পুলিশের মতে, বাপি নিজেই স্বপ্না ও সুজয়কে খুনের বিষয়টি জানিয়ে পালাতে বলে। এই ঘটনার নেপথ্যে ওই দম্পতি বা যুগলের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। এমনকী, রূপদাসী ও লক্ষ্মী আদৌ বোন কি না, তা নিয়েও পুলিশ ধন্দে।
পুলিশের ধারণা, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বজায় রাখতেই অপর্ণা বা স্বপ্না নাম ভাঁড়িয়ে বাড়ি ভাড়া নেন। এমনকী, সত্য প্রকাশ হয়ে যেতে পারে, তার জন্য বারবার চাওয়া সত্ত্বেও বাড়িওয়ালা বেহুলা মণ্ডল ও লক্ষ্মী মণ্ডলকে দেননি পরিচয়পত্রের ফোটোকপি। বাড়িওয়ালা লক্ষ্মী মণ্ডল জানান, মাসতিনেক আগে কাছেই একটি চিংড়ি প্রসেসিং কারখানার আট মহিলা কর্মীকে নিয়ে ঠিকাদার তাঁর ঘর তিন হাজার টাকায় ভাড়া নেন। কিছুদিন পর তাঁদের মধ্যে সাত কর্মীকে নিয়ে ঠিকাদার চলে গেলেও স্বপ্না থেকে যান।
কিছুদিনের মধ্যেই স্বামী পরিচয় দিয়ে অপর্ণার সঙ্গে ‘লিভ ইন’ শুরু করে বাপি। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করত সে। মাসিক দেড় হাজার টাকার বদলে ঘরের মালকিনকে পাঁচশো টাকা দিয়েছিলেন অপর্ণা। অপর্ণা ও বাপির মধ্যে আর্থিক ও সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে গোলমালের জেরেই এই খুন বলে ধারণা পুলিশের। অর্পণা বা রূপদাসী নিজের সন্তানকে কাছে রাখতে চেয়েছিলেন বলেই খুন কি না, তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.