ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: ব্রেথ অ্যনালাইজারে ফুঁ দিতেই ‘রিডিং’ এক লাফে ১৫০! দেখেই হতবাক পুলিশ আধিকারিকরা। গাড়ির চালক ও তাঁর সঙ্গিনী এতটাই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন যে, রাতের কলকাতায় তাঁদের হাতে স্টিয়ারিং থাকাই বিপজ্জনক বলে মনে করেছিল পুলিশ। তাই তাঁদের নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর থানায়। এরপর থানার মধ্যেই শুরু হয় যুগলের তাণ্ডব। নিজেদের ‘প্রভাবশালী’ বলে পরিচয় দেওয়া ওই যুগলকে সামলাতে রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা পুলিশের। একজন কোনও পুলিশকর্মীকে মারধর করেন, অন্যজন শুরু করেন গালিগালাজ। এমনকী, তাণ্ডব থামাতে গিয়ে থানার মধ্যে হেনস্তার শিকার হতে হয় একাধিক মহিলা পুলিশকর্মীকেও। শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি সৌমেন ভট্টাচার্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল পুলিশ। তাঁর সঙ্গিনীর বিরুদ্ধেও পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। দু’জনের বিরুদ্ধেই পুলিশের কাছে বাধা দেওয়া, শ্লীলতাহানি, পুলিশকে মারধর, মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি রাতের কলকাতায় মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর বিষয়ে পুলিশ যথেষ্ট কড়া হয়েছে। নাকা চেকিংয়ে ব্রেথ অ্যানালাইজারে মদ্যপ গাড়ি বা বাইক চালিয়ে কেউ ধরা পড়লেই তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে কড়া আইনি ব্যবস্থা। এরই মাঝেই রাতের কলকাতায় মদ্যপ যুগলের তাণ্ডব। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত এগারোটা নাগাদ ঢাকুরিয়ার দিক থেকে বান্ধবীকে নিয়ে গড়িয়ার দিকে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা সৌমেন ভট্টাচার্য। যাদবপুর থানার কাছে নাকা চেকিংয়ে দাঁড় করানো হয় গাড়িটি। থানা ও ট্রাফিক গার্ডের যৌথ নাকায় পুলিশ আধিকারিকরা ব্রেথ অ্যানালাইজার নিয়ে গাড়ির চালককে পরীক্ষা করেন। দেখা যায়, ৩০ যেখানে স্বাভাবিক বলে ধরা হয়, সেখান রিডিং ১৫০। বোঝাই যায়, অতিরিক্ত মদ্যপান করেছেন চালক।
ফলে এই অবস্থায় গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেই মনে করেন কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকরা। তাঁরা গাড়িটি আটক করে যুগলকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলেন। ওই মহিলাও যে অতিরিক্ত মদ্যপান করেছিলেন, পুলিশ তাও বুঝতে পারে। পুলিশের অভিযোগ, গাড়ি থেকে নেমে আসার পরই যুগল গোলমাল ও গালিগালাজ শুরু করেন। এরমধ্যেই যাদবপুর থানায় নিয়ে এসে যুগলের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর মামলা করা হয়। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে জামিন দিয়ে তাঁরা যাতে অন্য গাড়ি ধরে বাড়ি যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও পুলিশ করে।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এরপরই থানার মধ্যে যুগল চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করেন। তাঁদের থামাতে যান এক পুলিশকর্মী। তাঁকে মারধর ও ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। ওই মহিলা থানায় তাণ্ডব শুরু করলে মহিলা পুলিশকর্মীরা এগিয়ে আসেন। দু’জন মিলেই তাঁদের গালিগালাজ করেন। এমনকী থানার মধ্যেই মহিলা পুলিশকর্মীদের হেনস্তা ও এক মহিলা পুলিশকর্মীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে পুলিশের অভিযোগ। অবস্থা সামলাতে রাতে থানায় আসতে হয় পুলিশ আধিকারিকদের। শেষ পর্যন্ত ‘নেশা কাটলে’ গভীর রাতে তাঁরা শান্ত হন। তাঁদের জেরা করে জানা যায়, দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবে গিয়ে তাঁরা মদ্যপান করেন। মদ্যপ অবস্থায় বান্ধবীকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সৌমেন। রাতেই অভিযুক্ত সৌমেন ভট্টাচার্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁর বান্ধবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। থানা ও রাস্তার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.